একদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে এক বিক্রেতা। ছবি : এনটিভি

ভারত হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারগুলোতে। একদিনে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়ত ও খুচরা দোকান ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুস সবুর জানিয়েছেন, গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা। আজ ২০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়। অন্যদিকে, গতকাল দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজিতে ৬০ টাকা, যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকায়।

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হাসান বলেন, গতকাল দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা, যা আজ ২২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকায়।

ব্যবসায়ী সোহেল মিঞা বলেন, গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি কেজিতে ৪৬ টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকায়। এর কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সোহেল বলেন, ‘পেঁয়াজ কম। আমদানি নেই। দাম আরো বাড়তে পারে।’

সোহেল দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি করছেন ৪৫০ টাকা দরে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা বিক্রি করছেন ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়।

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। গতকাল দিনভর দেশের তিনটি প্রধান স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসেনি। এরপর রাতে ভারত সরকারের রপ্তানি বন্ধের নির্দেশনা দেশটির আমদানিকারকদের হাতে আসে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের এই নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে এই নির্দেশ কার্যকর হবে।

ভারত থেকে মূলত সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়।

এনটিভির হিলি প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। গতকাল সোমবার পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ভারত সরকার।

এদিকে, এই বন্দর দিয়ে গতকাল সোমবার পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতে আটকা পড়েছে পেঁয়াজবোঝাই ২৫০ থেকে ৩০০ ভারতীয় ট্রাক। এ ছাড়া আমদানির জন্য এলসি করা প্রায় ১০ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই বন্দরের আমদানিকারকরা।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে হিলি স্থলবন্দরের বাজারে প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়। গত রোববার ও কাল সোমবার এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়।

ভারতের হিলির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শংকর দাশ জানান, ভারত সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে।

শংকর দাশ আরো জানান, সাম্প্রতিককালে ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে মজুদ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। মূলত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই ভারত সরকার বন্যার কারণ দেখিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে গতকাল হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। শুধু হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ১০ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ আমদানির জন্য ভারতে এলসি করেছেন। যার বিপরীতে ২৫০-৩০০ ভারতীয় ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে ভারতে আটকা পড়েছে। এসব পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে না পারলে পেঁয়াজে পচন ধরে নষ্ট হবে। লোকসান গুনতে হবে আমাদের। আমরা চাই আমাদের এলসি করা পেঁয়াজগুলো দেশে পাঠানো হোক।’

বাংলাদেশে যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। ভারতে দুই সপ্তাহ আগে দাম বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানিই নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত ওঠে। তখন আকাশপথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এরপর ভারত গত মার্চ মাসে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।