লাখপতির গল্প

চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে যে কাজ ভালো পারি, তাই করি : কেয়া

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা মুমতাহিনা রহমান কেয়া। ছবি : সংগৃহীত

অনলাইনে দেশি তাঁতের শাড়ি বেচে লাখপতি বনে গেছেন মুমতাহিনা রহমান কেয়া। এ সেক্টরে তিনি কাজ করছেন খুব বেশি দিন নয়। এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এ উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান—কায়ান’স রূপবতী।

সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় মুমতাহিনা রহমান কেয়ার। জানান তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কুশল আর কী নিয়ে ব্যস্ত এখন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ঈদুল ফিতরের পর এখন ঈদুল আজহা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমি মূলত কাজ করি শাড়ি নিয়ে, আমাদের দেশি তাঁতের শাড়ি নিয়ে। তাই দুই ঈদে ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে।’

সফল উদ্যোক্তা মুমতাহিনা রহমান কেয়া। ছবি : সংগৃহীত

কত দিন যাবৎ কাজ করছেন আর কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে কেয়া বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ করে কাজ শুরু করা আমার, অনেকটা উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) হাত ধরেই বলা যায়। সিরাজগঞ্জের হাফ সিল্ক তাঁতের শাড়ি দিয়ে শুরুটা হয়েছিল, তবে এখন সিরাজগঞ্জের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের শাড়িও রেখেছি আমার পেজে (কায়ান’স রূপবতী)। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? মুমতাহিনা রহমান কেয়া বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়ে খুবই ভালো লাগছে। কারও অধীনে কাজ করতে হচ্ছে না, নিজের পছন্দমতো কাজ করার সুযোগ থাকে। তা ছাড়া ঘরে বসে, পরিবারকে সময় দিয়ে কাজ করতে পারছি, এটা সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি আসলে অনুপ্রেরণা পেয়েছি উই থেকে। উই-এ সবার লড়াই, সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প পড়তে পড়তে নিজের মধ্যে সাহস এসেছে।’

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কেয়া বলেন, ‘আমার পরিবার আমাকে ভীষণ ভাবে সাপোর্ট করে। তেমন বাধা আসলে পাইনি, তবে বাচ্চা খুব ছোট এবং কোনো হেল্পিং হ্যান্ড না থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে নিজেকে দাঁড় করাতে। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এখন অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছি।’

এ পর্যন্ত কী পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছেন? কেয়া বলেন, ‘এই এক বছরের বিজনেসে প্রায় তিন মাস আমার কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছি আমি। একেক মাসে একেক রকম বিক্রি হয়। কোনো মাসে খুব কম তো কোনো মাসে বেশ ভালো।’

সফল উদ্যোক্তা মুমতাহিনা রহমান কেয়া। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন মুমতাহিনা রহমান কেয়া। তার পর জব করেছেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। শেষ চাকরি করেছেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায়। কেয়া মনে করেন, চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে যিনি যে কাজ ভালো পারেন বা করতে ভালোবাসেন, সেই কাজকে কেন্দ্র করে কিছু করা উচিত। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এখন অনেক সুযোগ রয়েছে। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মত তাঁর।

উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর স্মৃতি? কেয়া বলেন, ‘মধুর স্মৃতি আসলে অনেক আছে। অনেক ক্রেতার সাথে এমন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যে এখন নিজের আপন জনের জায়গা নিয়েছেন তাঁরা। কারও প্রিয়তমার রাগ ভাঙাতে, মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে, প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে মাকে শাড়ি কিনে দিতে, বোনদের আবদার পূরণ করতে, বান্ধবীকে সারপ্রাইজ দিতে... আমার পণ্য নিয়েছেন। এগুলো প্রতিটিই আমার জন্য অনেক অনেক ভালোলাগার গল্প। আমার সফলতার পেছনে এমন ভালোবাসার অবদান অনেক বেশি।’

সফল উদ্যোক্তা মুমতাহিনা রহমান কেয়া। ছবি : সংগৃহীত

উই-এর ফেসবুক গ্রুপ আপনার উদ্যোক্তা-জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে? মুমতাহিনা রহমান কেয়া বলেন, ‘ছোট বাচ্চা রেখে জব করতে পারব না বলেই জবটা ছেড়ে দিই। কিন্তু তার পর থেকে একটা হতাশা আমাকে ঘিরে ধরে। খুব ডিপ্রেশন কাজ করত নিজের মধ্যে। এই সময়টায় উই-তে সময় কাটাতে শুরু করি। সবার লেখা পড়তাম, সবার লড়াই করে নিজেকে পরিচিত করানোর গল্পগুলো আমাকে নাড়া দিত, অনুপ্রেরণা দিত। সেই ভাবনা থেকেই কাজটা শুরু করা। চেয়েছিলাম এমন কিছু করতে, যেটাতে আমি আমার বাচ্চাকেও সময় দিতে পারব, আবার কাজটাও ঠিকমতো করতে পারব। আমার পথটা স্পষ্ট হয় উই থেকেই।’

বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনি হতে পেরেছেন? কেয়ার উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি লাখপতি হতে পেরেছি বেশ আগেই। উই থেকেই পথ চলা শুরু এবং লাখপতি হওয়াটাও সম্ভব হয়েছে উই-এর কারণে। উই-এর প্রতি সব সময়ই কৃতজ্ঞতা জানাই।’

আগামী দিনের পরিকল্পনা কী? কেয়া বলেন, ‘আমি নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই। এই পথটা অনেক লম্বা এবং কষ্টের, তার পরও করতে চাই। আরও কিছু পণ্য যোগ করতে চাই আমার পেজে, যেগুলো অবশ্যই কোয়ালিটিফুল হবে।’ কেয়ার স্বপ্ন পূরণ হোক, এ প্রত্যাশা সবার।