চীনের জিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত পণ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাংলাদেশে কতটা?

Looks like you've blocked notifications!
প্রতীকী ছবি

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের খবর অনেকটা আড়ালে চলে যায়। কিন্তু, সম্প্রতি সে স্মৃতি ফিরিয়ে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উৎপাদিত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে। সংগঠনটি তার সদস্যদের চীন থেকে কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যেসব কোম্পানি চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানি করবে, তাদের প্রত্যয়ন করতে হবে যে—এসব পণ্য জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি হয়নি। ‘উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট’ বা উইঘুর জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ আইনের আলোকে জিনজিয়াং প্রদেশে উৎপাদিত পণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২১ জুন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। খবর বিবিসির।

তবে, চীন বরাবরই বলে আসছে—জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমেরা ঐতিহ্যগতভাবেই বসবাস করে। সেখানে কেউ তাদের জোর করে আটকে রাখেনি।

তবে, চীনা কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ফাঁস হওয়া নথিপত্র ও সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে আসা নথিপত্রে প্রমাণ হয়েছে—জিনজিয়াংয়ে দলগত ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের অনেক নজির পাওয়া গেছে।

এদিকে, জিনজিয়াংয়ের পণ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উদ্‌বেগে রয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের একাংশ। কারণ, হিসেবে তাঁরা বলছেন—মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে কাপড়ের দাম বাড়তে পারে। তবে, নিষেধাজ্ঞার তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ।

গত মাসের শেষদিকে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক দুই প্রতিনিধি বিজিবিএর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আলোচনায় সংগঠনকে জানানো হয়—বাংলাদেশে চীন থেকে তুলাজাত কাপড় আমদানি করা হলে, সে তুলা যদি জিনজিয়াং প্রদেশের হয়, এবং সে কাপড় থেকে তৈরি পোশাক যদি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, তাহলে তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। এবং যদি কোনোভাবে প্রমাণ হয় যে, পোশাকগুলো জিনজিয়াংয়ের তুলাজাত কাপড় থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে, তাহলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর ফলে রপ্তানি করা সে পোশাকের বিপরীতে বাংলাদেশে কোনো অর্থও প্রত্যাবাসন হবে না বলে জানিয়েছে বিজিবিএ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই বলছে—বাংলাদেশের তৈরিপোশাক শিল্প যখন করোনা ও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এলো। এতে শঙ্কার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—বাংলাদেশে তৈরিপোশাক শিল্পে ব্যবহৃত তুলার ৩০ ভাগ আসে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে।

তবে, কেউ কেউ বলেছেন—চীনের তুলার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে না। কারণ, জিনজিয়াং ছাড়া বাংলাদেশের আমদানিকারকদের জন্য চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে।

তবে, শঙ্কার মাঝে আলোর রেখাও। চীন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বিভিন্ন ক্রয়াদেশ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। তৈরিপোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন—চীনা পণ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির ক্রয়াদেশগুলো ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশে আসতে পারে। এ ছাড়া সুফল ভোগ করতে পারে ভারত ও পাকিস্তানও।