দেশের কৃষি অর্থনীতিতে কাতার প্রবাসীর অবদান

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর গ্রামে ‘তুহিন কমপ্লেক্সে’ নিজ লেয়ার মুরগির ফার্মে কাতার প্রবাসী মো. তুহিনুল হক। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর গ্রামের মো. তুহিনুল হক মধ্যপ্রচ্যের দেশ কাতারে আছেন ৩০ বছর ধরে। তিনি সেখানে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই কাজে তিনি অর্থ এবং সুনাম দুটোই অর্জন করেছেন। সেখানে শত শত শ্রমিক তিনি ভৈরব-কুলিয়ারচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়েছেন। ফলে তাঁর হাত ধরে এসব শ্রমিক পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।  

এখন তুহিনুল হকের স্বপ্ন দেশের কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখা। তাই মানুষের আমিষ ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৎস্য, পোলট্রি, কৃষিতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন। এতে গ্রামাঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। তাঁর স্বপ্ন কাতার থেকে যখন একেবারে দেশে চলে আসবেন, তখন তাঁর সব পুঁজি এই খাতে বিনিয়োগ করবেন।

কাতারে তুহিনুল হক ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কাজেও জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সহসভাপতি এবং এনটিভি দর্শক ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর এসব সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সেখানকার বাঙালি কমিউনিটির সেবা করে যাচ্ছেন।

গ্রামের ছেলে হিসেবে কৃষি খাতের প্রতি তুহিনুল হকের বেশ দুর্বলতা সেই ছেলেবেলা থেকেই। তাই কাতার থেকে দেশে ছুটিতে এলে তিনি এই খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ করেন। এরই মধ্যে তিনি মৎস্য চাষ, পোলট্রি খামার, জৈবসার উৎপাদন প্রকল্প, উন্নতজাতের গরু ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। এতে তার এলাকায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখার পামাপাশি অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে।

তুহিনুল হক জানান, ইতোমধ্যে তিনি উপজেলার বাজরা এলাকায় ২৬ বিঘা জমির উপর একটি পুকুর কেটে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করছেন। উপজেলার উসমানপুর এলাকায় ‘তুহিন অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামের তুহিন কমপ্লেক্সে গড়ে তুলেছেন লেয়ার মুরগির ফার্ম, ট্রাইকো কম্পোজ জৈব সার, উন্নতজাতের বকনা গরুর খামার, দেশি মুরগির খামার এবং উন্নতজাতের ছাগলের খামার। যা আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তিনি এসব খামারের মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করাসহ খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদায় ভূমিকা রাখতে চান।

তুহিনুল হক আরও জানান, কাতারস্থ তার অনেক দেশীয় বন্ধু আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদ করছেন। কিন্তু, তিনি তাঁর সব আয় বিনিয়োগ করছেন দেশে, নিজ এলাকায়।

তুহিনুল হকের প্রত্যাশা, যখন বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে চলে আসবেন, তখন সব অর্থ নিজ এলাকায় বিনিয়োগের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। এলাকার প্রবাসীদের সবাইকে তিনি নিজ নিজ এলাকায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তুহিনের টাইকো কম্পোস্ট জৈবসার প্রকল্প এলাকার কৃষি উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই জৈবসার মাটির ঊর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিসহ বালাইনাশক হিসেবে কাজ করে। গাছের ১৭টি উপাদানের মধ্যে ১৪টিই এই টাইকো কম্পোস্ট সারের মাঝে পাওয়া যায়।

এই সার প্রস্তুত, বিপণন, ব্যবহার-সব কিছুতেই পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, তুহিনুল হকের সাফল্য কামনা করছি।

প্রাণিসম্পদ খাতে প্রবাসী তুহিনুল হকের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজহার আলম বলেন, এসব খামার এলাকার বেকারত্বদূরীকরণসহ দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং অন্যদের এসব খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

খামারের টাইকো কম্পোস্ট জৈবসার প্রস্তুত ও বিপণনের দায়িত্বে থাকা শাহিন মিয়া জানান, ৫০ শতাংশ গোবর, ২০ শতাংশ মুরগির বিষ্ঠা এবং বাকি ৩০ শতাংশ কচুরিপানা, কাঠেরগুঁড়া, চালের গুঁড়া, চা ও কলাপাতা মিশিয়ে এক সঙ্গে জাগ দিয়ে রাখা হয়। সেগুলো সাত দিন পরপর উলট-পালট করতে হয়। এমনি করে ৪৫ দিন পর টাইকো কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। তিনি জানান, এই সার বর্তমানে বেশ সাড়া জাগিয়েছে কৃষকদের মধ্যে। জমিতে ব্যবহারের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাহিদা আসছে। ফলে উৎপাদন বাড়িয়েও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।