নকলটার বদলে আসলটা দিচ্ছে লাইবা রুটি মেকার

Looks like you've blocked notifications!
লাইবা রুটি মেকার। ছবি : সংগৃহীত

নকল পণ্য কিনে ঠকে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে লাইবা রুটি মেকার ফ্যাক্টরি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও লাইবা রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমার উদ্ভাবন করা রুটি মেকার দেখে অনেকে ভুল পদ্ধতিতে কোনো সঠিক মাপ ছাড়াই রুটি মেকার তৈরি করেছে এবং এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ তা কিনে ঠকেছেন। যারা প্রতারিত হয়েছেন তাদের ধারণা কাঠের রুটি মেকারে রুটিই হয় না। যারা ঠকেছেন তাদের জন্য আমাদের একটি অফার চলছে- নকল রুটি মেকারের বদলে তারা লাইবা রুটি মেকার নিতে পারবেন ফ্রি-তে। তবে এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে ভিডিওচিত্রে অংশগ্রহণ করতে হবে। নকলবাজদের রুখতে এই কৌশল নিয়েছি। এই অফারটি আরও কয়েক সপ্তাহ চলবে।’ 

লাইবা রুটি মেকার (LAAIBAH RUTI MAKER) একটি কাঠের যন্ত্র, যাতে যেকোনো আকারের খামি/ডো ব্যবহারে এক মিনিটে অন্তত ১০/১২টি পারফেক্ট সাইজের গোল ও কাগজের মতো পাতলা রুটি বানানো যায়। এই যন্ত্র রুটি ভেজে দেয় না। এটি ব্যবহারে বিদ্যুৎ লাগে না। সময়সাশ্রয়ী ও সহজভাবে এই যন্ত্রে মাল্টি-রেসিপি রুটি তৈরি করা যায় এবং হাতে বানানো রুটির স্বাদ রক্ষা হয়। হুমায়ুন কবীর ২০১১ সালের শেষ দিকে এই যন্ত্র উদ্ভাবন করেন।

ইতিহাস

লাইবা রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন কবীরের বাড়ি বাংলাদেশের মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামে। শহরে শহরে বেড়ে ওঠা হুমায়ুন কবীর ছোটকাল থেকে উদ্ভাবনীয় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। কর্মজীবনে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেখানেও উদ্ভাবনি কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। এরপর চাকরি ছেড়ে ২০১১ সালে তিন মাসের প্রচেষ্টায় রুটি বানানোর একটি কাঠের যন্ত্র উদ্ভাবন করেন তিনি। তাঁর বড় মেয়ের লাইবার নামে এই যন্ত্রের নাম দেন ‘লাইবা রুটি মেকার’। তিনি পরবর্তী সময়ে আরও গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত দিকের মানোন্নয়ন এবং ব্যবহার সহজ করে তুলে যন্ত্রটি দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করছেন নিজের প্রতিষ্ঠান লাইবা রুটি মেকার ফ্যাক্টরি ও লাইবা রুটি মেকার ইন্টারন্যাশনালের মধ্যমে। বুনাগাতি গ্রামে লাইবা রুটি মেকারের আধুনিক ফ্যাক্টরিতে এখন অন্তত দুইশ নারী-পুরুষ কাজ করছেন।

তৈরি ও ব্যবস্থাপনা

উদ্ভাবক হুমায়ুন নিজেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইবা রুটি মেকার ফ্যাক্টরির কর্মীদের গড়ে তোলেন। কাঠ সরবরাহ, সিজনিং, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে তাঁর রয়েছে আধুনিক ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা কাঠ ১১ থেকে ১৩ শতাংশ মশ্চার রাখা হয় বলে অনেক দিন একই রকম থাকে। সতর্কতার সঙ্গে ওয়াটার লেভেল সংরক্ষিত হয় বলে এই যন্ত্রের কাঠ সাধারণ আসবাবের মতো এঁকে-বেঁকে যায় না। সঠিক পরিমাপে কাঠ কেটে নির্দিষ্ট আকারে বানানো হয় রুটি মেকার। এখন লাইবা রুটি মেকারের তিনটি মডেল রয়েছে। প্রতিটি প্যাকেজের সঙ্গে ক্রেতাকে দেওয়া হয় একটি রুটি মেকার, এক প্যাকেট ফুড গ্রেড পেপার (রুটি স্বাস্থ্যকর রাখে), ব্যবহার জানার জন্য একটি সিডি, একটি ম্যানুয়াল বুক, দুইটি টেপ, লাইবা ব্রান্ডের কার্টুন ও ইনভয়েস।

বিক্রি ও বাজার

সময়সাশ্রয়ী ও সহজে রুটি হয় বলে দেশে ও বিদেশে লাইবা রুটি মেকারে বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। লাইবা রুটি মেকারের ফ্যাক্টরি, ঢাকার আগারগঁওয়ের অফিস ও সেলস সেন্টার থেকে সরাসরি পণ্য বিক্রি হয়। এ ছাড়া ওয়েবসাইট www.rutimaker.com ফেইসবুক পেইজ facebook.com/Laaibahrutimakerfactory এর মাধ্যমে যোগাযোগ করেও দেশ-বিদেশের ক্রেতারা পণ্যটি কেনেন।

প্রচার

লাইবা রুটি মেকার উদ্ভাবনের পর দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম পরিচিত হয়ে ওঠেন উদ্ভাবক হুমায়ুন কবীর। দেশের শীর্ষ সংবাদপত্র প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সমকাল, ইত্তেফাক, মানবজমিন, বণিক বার্তা, জনকণ্ঠ, সংবাদ, দি ইনডিপেন্ডেন্ট, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, কালের কণ্ঠ, যায়যায়দিন, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব, আমার দেশ, ভোরের কাগজ, লন্ডন থেকে প্রকাশিত জনমত, অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ, এনটিভি অনলাইন ও একাত্তর টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে লাইবা রুটি মেকার নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েও ব্যাপক সাড়া ফেলে লাইবা রুটি মেকার। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লাইবা রুটি মেকার নিয়ে ইতিবাচক লেখালেখি হয়েছে।

নকলবাজদের দৌরাত্ম্য রুখতে হবে  

হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, দেশের প্রথম কাঠের রুটি মেকার লাইবা রুটি মেকার বাজারে ছাড়ার পর থেকে হাজারো নকলবাজের দৌরাত্মে দুর্নামের ভাগিদার হতে হচ্ছে তাঁকে। অনেকে এটিকে আসবাবের মতো সাধারণ পণ্য মনে করে নকল করছে, যাতে রুটি হচ্ছে না। নকল পণ্য অল্প সময়ে নষ্টও হয়ে যায়। এজন্য ঠকা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি আমরা। নকল রুটি মেকার আমাদের কাছে জমা দিলে আমরা আসল লাইবা রুটি মেকার দিচ্ছি। কোনো মূল্য নিচ্ছি না। তবে এক্ষেত্রে ভিডিওচিত্রে অংশ নিয়ে নকল পণ্যটির বিষয়ে বলতে হবে। নকলবাজদের রুখতে আমরা এই কৌশল নিয়েছি।

হুমায়ুন কবীর বলেন, নকলবাজদের রুখতে না পারলে বাংলাদেশে কোনো উদ্ভাবক দাঁড়াতে পারবেন না। আর এই প্রবণতা উদ্ভাবন চিন্তার বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে নকলবাজদের প্রতিহত করা উচিত।