পচা পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা !
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/16/onion-1_1.jpg)
শ্যামবাজারের শেষ অংশটি মিলেছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। সেখান থেকে আসছে পচা পেঁয়াজের গন্ধ। বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ ফেলা হয়েছে নদীতে। একাধিক নারী পানিতে নেমে পচা পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে।
আজ শনিবার বিকেলে ওই দৃশ্য দেখা গেল। সংগ্রহ করা পচা পেঁয়াজ কয়েক হাত বদল হয়ে বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ম দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা!
চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৩০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা।
শ্যামবাজারে আকলিমা আক্তারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁকে দেখা যায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ফেলে দেওয়া পঁচা পেঁয়াজ বেছে বেছে আলাদা সরিয়ে রাখছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আড়তে রাখার কারণে পেঁয়াজ পইচ্চা গেছে। হের লাইগা দোকানের মালিক নদীতে ফালায়া দিছে। আমি এগুলো টোকায়া টোকায়া বাজারে বেঁচমু।’
আকলিমা বলেন, 'প্রতিদিনই সকালে ও বিকালে পেঁয়াজ ফালানো হয়। আমরা সেগুলো টোকায়া পরিষ্কার করে শুকাইয়া বেচি।’
শ্যামবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তদাররা পচা পেঁয়াজ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। আবার সে পচা পেঁয়াজ অনেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেকে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে।
শ্যামবাজারে একটি ফুটপাতে পেঁয়াজের পসরা নিয়ে বসেছিলেন কালাম। নদী থেকে কুড়িয়ে আনা পেঁয়াজ কিনছেন তিনি। একাধিক নারী তাঁর কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তিনি এগুলো আবার বাছাই করে আলাদা করে রাখছেন। তারপর জানালেন, তিন ধরনের পেঁয়াজ আছে তাঁর। আংশিক পঁচা পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, নরম পেঁয়াজ ২০০ টাকা ও ভালো মানের পেঁয়াজ ২৩০ টাকা। পেঁয়াজ কুড়িয়ে আনা নারীদের কাছ থেকে তিনি প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে কিনছেন। তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক কম পেঁয়াজ কিনে। আগে পেঁয়াজ অনেক বিক্রি হতো। দাম বেশি হওয়ায় অনেকে আড়াইশ গ্রাম কিনে নেয়। আর এক কেজির পেঁয়াজ নেওয়ার মতো মানুষ খুবই কম বলে দাবি করেন তিনি।
কালাম বলেন, ‘ওই মহিলাদের কাছ থেকে পানিতে ফেলে দেওয়া পেঁয়াজ কিনি। তারপর তা পাবলিকের কাছে বিক্রি করি। তিনি আরো বলেন, ‘অনেক হোটেল আমাদের কাছ থেকে পচা পেঁয়াজ নিয়ে যায়।’
দবিরুল নামের এক ব্যক্তি শ্যামবাজারে ওই ধরনের পেঁয়াজ কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। একদিনে যা কামাই করি তা এক কেজি পেঁয়াজের পিছনে চলে যায়। এতে আমরা চাল বা তরকারী কি খামু?’
এদিকে শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জাহিদ বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা আর পাবনার গুড়া নতুন পেঁয়াজ ২০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাহিদ বলেন, ‘আমাদের অনেক বেশি দিয়ে কিনে আনতে হয় বলে দাম বেশি রাখা লাগছে। তবে মাল (পেঁয়াজ) বাজারে ঢুকলে এর দাম দ্রত কমে যাবে।’
ভোক্তা অধিকারের অভিযান
আজ শ্যামবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অভিযান চালিয়ে অধিক দাম রাখার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্যামবাজারে এসে দেখা গেছে অনেক পাইকাররা কেজি প্রতি ৮৩ টাকা লাভ করছে। এর মধ্যে মেসার্স ‘রিতা মুক্তা বাণিজ্যালয়ে’ পেঁয়াজের ক্রয় রসিদ দেখতে চাওয়া হয়। রসিদে ক্রয় মূল্য লেখা ১৩৭ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করছে ২২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারিতে কেজিতে লাভ করছে ৮৩ টাকা। এজন্য তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাঁরা জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসা করে বলে জানান তিনি।