পাল্লায়-পাল্লায় পেঁয়াজ কিনছে মানুষ

Looks like you've blocked notifications!
সাধারণ ক্রেতা যারা আগে এক-দুই কেজি করে কিনত, তারা পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় এখন পাল্লায়-পাল্লায় কিনে মজুদ করছে। ছবিটি আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

দুই দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এতে অস্থিরতা বিরাজ করছে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিক্রিও। সাধারণ ক্রেতা যারা আগে এক-দুই কেজি করে কিনত, তারা পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় এখন পাল্লায়-পাল্লায় কিনে মজুদ করছে। (পাঁচ কেজিতে এক পাল্লা)।

গত দুদিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে অন্তত ৩০ জন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সংখ্যায় কম হলেও পাঁচ কেজির কম পেঁয়াজও কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।

ক্রেতারা বলছে, গত বছর ঠিক এই সময়েই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পরে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। কারণ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এবারও একই পরিবেশ, এমন শঙ্কায় তারা পাল্লায়-পাল্লায় পেঁয়াজ কিনছে।

বিক্রেতারা বলছে, ক্রেতার বেশি বেশি পেঁয়াজ কেনার ফলেই দাম বেশি বাড়ছে। অপরদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর তো আছেই। এ ছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগে পেঁয়াজ মজুদ করছে। ফলে পেঁয়াজের একটি কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।

আজ বুধবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বাজারের চেয়ে পাইকারি বাজারে ক্রেতারা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

আজ বুধবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বাজারের চেয়ে পাইকারি বাজারে ক্রেতার ভিড় বেশি। কারণ, ক্রেতারা বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনে মজুদ করছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি হাইব্রিড ৯০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ কিনতে। তিনি বলেন, ‘আজ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। কাছে বেশি টাকা থাকলে হয়তো আরো কিছু কিনে রাখতাম। দাম যে আরো বাড়বে না তার তো ঠিক নেই। সময় পেলে পরে আবার আসব।’

রাকিবুল ইসলাম পেঁয়াজ কিনেছেন রুবেল নামের এক বিক্রেতার কাছ থেকে। রুবেল বলেন, ‘এক বা দুই কেজি করে পেঁয়াজ না কিনে ক্রেতারা পাঁচ কেজি বা তারও বেশি কিনছে। দাম বাড়বে এই ভয়ে তারা বাসায় নিয়ে জমিয়ে রাখছে।’

গতকালও বাজারে গিয়ে এই ধরনের চিত্র দেখা গিয়েছিল। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ে আতঙ্কিত না হতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এবং কেউ যেন মজুদ না করে সেই ব্যাপারেও আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত দুদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছবিটি আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফিরোজ শাহ নামের এক ক্রেতা একসঙ্গে ২০ কেজি দেশি পেঁয়াজ কেনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘২০ কেজি পেঁয়াজ আড়াই মাস চলবে। গত বছর ঠিক এই সময়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে হু হু করে দাম বেড়ে গিয়েছিল। বহুদিন বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনে খেতে হয়েছিল। সেই ভয়ে এবার একসঙ্গে ২০ কেজি কিনলাম।’

মজনু নামের এক আড়তদার আজ বুধবার বিকেলে বলছিলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কিন্তু কাল পর্যন্ত বেড়েছিল। আজ কালকের দামেই চলছে। তবুও মানুষ অনেক অনেক করে পেঁয়াজ কিনছে। পাল্লা (পাঁচ কেজি) হিসাবে সাধারণত আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সব ক্রেতা বাড়ির জন্য বেশি বেশি কিনছে। শুধু ব্যবসায়ীদের দোষ দিলে কিন্তু হবে না। এখানে ক্রেতাদেরও দোষ আছে। দাম কিন্তু তারাও বাড়াচ্ছে।’

আফরিন রাজিয়া নামের এক ক্রেতা কাঁচাবাজারের ভেতরে পেঁয়াজসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে গেছেন। তিনি তিন কেজি পেঁয়াজ কিনলেন মো. আবদুলের দোকান থেকে। রাজিয়া বলেন, ‘বাড়িতে পেঁয়াজ নেই বলে কিনলাম। তবে আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আমার মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে দাম কমে যাবে। সুতরাং বেশি কিনে আরো প্যানিক তৈরি করতে চাই না।’

বিক্রেতা মো. আবদুল বলেন, ‘সকালে ৮৫ টাকা কেজিপ্রতি দুই বস্তা (১৬০ কেজি) কিনেছি। আর ১০ কেজির মতো আছে। গতকালের মতো অত বেশি বিক্রি নাই আজ; কিন্তু আজও বিক্রি কম না। মানুষ বেশি বেশি করে কিনছে। একটু আগে একজন ১০ কেজি কিনল ৯০ টাকা করে।’