পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস, সূচক সাড়ে ৪ বছরে সর্বনিম্ন

Looks like you've blocked notifications!

অনেকটা নীরবে ধীরে ধীরে, বড় ধরনের ধস নামল দেশের পুঁজিবাজারে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি সূচকের টানা পতনে পুঁজি হারিয়ে এখন দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। তাই পুঁজিবাজারে এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আস্থার সংকট। দেশের সার্বিক অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুজিঁবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার লেনদেন হয় যেসব ব্রোকারেজ হাউজে, সেখানকার চিত্রটি এখন বেশ ভিন্ন। এখানে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা তেমন নেই, তাই ব্যস্ততা নেই ট্রেডারদের। যারাও বা কিছু লেনদেন করছে, তাদের মুখে শুধুই ক্ষোভ আর আক্ষেপ।

এক বিনিয়োগকারী এনটিভিকে বলেন, ‘কেউই ভালো নেই। সবার অবস্থাই খারাপ। ধারবাকি করে টাকা নিয়ে এসেছি, সব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল টাকা নিয়ে এসেছি স্ত্রীর কাছ থেকে, এখন বাসায় গেলেই জিজ্ঞেস করবে কী অবস্থা। সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নাই। আমরা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

টানা দর পতনের পর গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়ায় ৪১২৩ পয়েন্ট, যা গত সাড়ে চার বছরে সর্বনিম্ন। আর গত এক বছরে বাজারের পুঁজি কমেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা অনেকটা হুড়াহুড়ি করে শেয়ার বিক্রি করছেন দাম আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কায়।

দেশের পুঁজিবাজারের বড় অংশই ব্যাংকিং খাতের দখলে। আর বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও এই ব্যাংকগুলো। আগামী এপ্রিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কের সুদের হার ব্যাংকগুলোতে কার্যকর করতেই হবে- এমন ঘোষণা ইতিমধ্যে নানা সংকটে থাকা ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আরো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে।

বিশ্লেষককরা বলছেন, সুশাসনের অভাব, পাহাড় সমান খেলাপি ঋণ আর নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক খাতে চলমান অস্থিরতার খেসারত দিতে হচ্ছে পুঁজিবাজারকে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘তারল্য সৃষ্টি হয় মানি বাজারে, সেখান থেকে প্রবাহ তৈরি হয় পুঁজিবাজারে। মানি মার্কেটে যদি সংকট থাকে সে টাকা পুঁজিবাজারে আসবে এমন ঘটনা ঘটা কঠিন। এ কারণে বিনিয়োগের জন্য যে অর্থ পুঁজিবাজারে সেটা ধীরে ধীরে কমে গেছে। এবং যেহেতু নতুন করে বিনিয়োগ আসছে না, ফলে দামও পড়ে গেছে।’

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘এবারকার যে ধসটা, এটা কিন্তু আস্তে আস্তে কমে গেছে। আমরা বলতে পারব না যে বিনিয়োগকারীরা কোনো দোষ করেছে। আমরা ভালো আইপিও দিতে পারিনি। আমরা পুরো বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ম্যানিপুলেশন অত্যন্ত সুস্পষ্ট।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে পুঁজির সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগের অভাব আর খারাপ কিছু প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তিও বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট আরো বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।