লাখপতির গল্প

পেশায় শিক্ষক, উদ্যোক্তা হয়েও সফল সাফরিন

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা ফারহান ই সাফরিন। ছবি : সংগৃহীত

পেশায় শিক্ষক হলেও উদ্যোক্তা-জীবনে সফল ফারহান ই সাফরিন। অনলাইনে দেশি পণ্য বিক্রি করে লাখপতি বনে গেছেন সাফরিন। তাঁর অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—দেশি অম্বর (Deshi Amber)।

সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় ফারহান ই সাফরিনের। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কুশল জানতেই তাঁর জবাব, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। সামনে ঈদ, পূজা; তাই নতুন কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে। এ সেক্টরে কাজ করছি অনেক দিন, কিন্তু আত্মপ্রকাশ ২০১৯ সালে। আমার সিগনেচার পোশাক কাস্টমাইজড হ্যান্ডপেইন্ট ফ্যামিলি কম্বো। আলহামদুলিল্লাহ, কাস্টমাইজড পোশাকের সাড়া পাচ্ছি বেশ। তা ছাড়া ছেলেদের হ্যান্ডপেইন্টেড পাঞ্জাবির গেল ঈদে বেশ চাহিদা ছিল।’

সাফরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন। এ ছাড়া বিজিএমইএ থেকে ডিজাইনিংয়ের ওপর সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন। ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল অবাধ বিচরণ। নাচ, গান আবৃত্তি প্রতিটি বিষয়ে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে। ১৯৯৫ সালে নৃত্যে জাতীয় পুরস্কারসহ নতুন কুঁড়ি শিশু একাডেমি শিক্ষা সপ্তাহের মতো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছেন। আবৃত্তি করেন। বগুড়া থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন একসময়। এমন নানা গুণ রয়েছে সাফরিনের।

বর্তমানে কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? উত্তরে সাফরিন বলেন, ‘দেশীয় পোশাক নিয়ে আমার কাজ। রং নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। তাই কাস্টমাইজড হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাক আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট। এ ছাড়া শিবুরি টাই-ডাই, ব্লক নিয়েও কাজ করি। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি আর বাটিকের শার্ট নিয়ে কাজ করি। আর মেয়েদের শাড়ি, কামিজ, কুর্তি, ফতুয়া, শীতকালীন শাল। বেশি সাড়া পাই ম্যাচিং পোশাকে। সামনে রাজশাহী সিল্ক, ডেনিম, ভেজিটেবল ডাই নিয়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছে আছে। সেটা নিয়েই কাজ করছি।’

উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? সাফরিন বলেন, ‘পেশায় শিক্ষক হলেও আমি একজন উদ্যোক্তা বলতে গর্ববোধ করি। নিজেকে ডিজাইনার হিসেবে দেখার স্বপ্ন ছিল, দেশীয় কাপড় নিয়ে কাজ করার লক্ষ্য ছিল। ডিজাইনার বিবি রাসেল ম্যামকে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে পোশাকের মাধ্যমে রিপ্রেজেন্ট করতে দেখে ভীষণ ভালো লাগত। বাবাও না করেননি; এইচএসসির পর আমার পছন্দসই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা, যদিও মায়ের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবে মেয়ে।’

উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) ফেসবুক গ্রুপ সাফরিনের উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে সাফরিন বলেন, ‘মূলত উদ্যোক্তা-জীবনের শুরুই আমার উই-এর হাত ধরে। পড়াশোনা করেছি টেক্সটাইল সেক্টরে, কিন্তু নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। উই-এর কারণেই স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছি। ইনশা আল্লাহ, উই-এর সাথে থেকে স্বপ্ন পূরণ হবে। করোনাকালে যখন চারদিকে হতাশা, তখন উই না থাকলে মনে হয় সত্যি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম। এখন উই-এর ঢাকা আশকোনা উত্তরার কো-অর্ডিনেটর হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? ফারহান ই সাফরিন বলেন, ‘পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে যেত। যদিও প্রথম দিকে অতটা সম্মতি ছিল না, কিন্তু যখন পরিবর্তনটা দেখতে পেলেন, তখন মৌন থেকেই সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ।’

বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনি হতে পেরেছেন? উত্তরে সাফরিন বলেন, ‘জি, আলহামদুলিল্লাহ পেরেছি। সেই দিনের অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। যখন অল্প কিছু বাকি ছিল লাখপতির ঘর ছুঁতে, ঠিক তখনই উই-এ সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই দিন ভুলবার নয়।’

সাফরিনের ইচ্ছে, আগামী দিনে নিজস্ব ডিজাইনের কালেকশন আনবেন, যা দেশীয় কাপড়ে ফিউশন আকারে চিত্তাকর্ষক হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ হোক সাফরিনের, এ প্রত্যাশা সবার।