ফুলের বাজারে করোনার হানা!

Looks like you've blocked notifications!
ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালীতে জমে উঠেছে ফুলবাজার। ছবি :  এনটিভি

বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে হাট জমলেও করোনা মহামারির কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় ফুলের কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা।

গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি ফুল তিন থেকে পাঁচ টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুলের বাণিজ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, চাহিদা না থাকায় এ বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত চার দিনে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।

ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফুলের বাজার শুরু হয়েছে। আজ ছিল সবচেয়ে বড় বাজার। আজ ভোর থেকেই বাজারে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে গদখালী হাটে হাজির হন চাষিরা। পর্যাপ্ত ফুল ওঠায় জমে ওঠে গদখালীর ফুলহাট। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে ফুল কিনেন।

চাষিরা জানান, গত বছর এ সময় প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ১৬ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল। অন্য ফুলও উচ্চদামে বিক্রি করেছেন তাঁরা। তবে এ বছর দাম তার থেকে কিছুটা কম। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ অবস্থা। তবে যে বেচাকেনা হয়েছে তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট।

সুমন হোসেন নামে একজন চাষি বলেন, ‘আজকে আমি তিন হাজার গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছি। শুরুতে ১০ থেকে ১১ টাকা করে প্রতিটি ফুল বিক্রি করেছি। পরে নয় টাকা করেও বিক্রি করেছি। জমিতে আরো ফুল আছে। গত দুদিনও ভালো দামে ফুল বিক্রি করেছি। এ বছর করোনার কারণে সমস্যায় ছিলাম। তবে ফুলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম অনেক কম। ধারণা করেছিলাম, আজকের বাজারে প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি করব।’

সোলায়মান হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘ফুল নয় থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। গোলাপ ফুল আনছি ছয় হাজার। গত বছরের থেকে এবার মার্কেট কম। গত বছর মাল বিক্রি করেছি ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে। যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাও সন্তোষজনক। তবে করোনা ও আম্পানের পরে এ দামে লাভ করা যাবে না।’

ফুলচাষি আমিনুর রহমান বলেন, ‘বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুতিটা ভালোই ছিল। আশা করছিলাম, এ বছর গোলাপের দাম ১৫ টাকা করে পাব। কিন্তু এ বছর গোলাপের দাম তিন টাকা করে কম পাইছি। অন্যান্য ফুল রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাসের দামও অন্য বছরের তুলনায় কম পাচ্ছি। তারপরও আমরা আশাহত হইনি। মূলত করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাজারে প্রভাবটা পড়েছে।’

এদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ফুলের ক্রয়মূল্য তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে তাঁরা।

পাবনা থেকে আসা রায়হান আলী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আজ এ হাট থেকে গোলাপ ফুল কিনেছি আট থেকে ১০ টাকার মধ্যে। আশা করেছিলাম, পাঁচ থেকে ছয় টাকার মধ্যে গোলাপ কিনতে পারব। কিন্তু সেটা হলো না। আবার স্কুল-কলেজ বন্ধ। সেই ক্ষেত্রে ফুলটা কিনে নিয়ে ঠিকঠাক মতো বিক্রি করতে পারবো কি না এটা নিয়ে একটু সংশয়ের মধ্যে আছি।’

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে আসা হায়দার আলী বলেন, ‘প্রতি বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের আগে ফুল কিনতে আসি। আট টাকা থেকে ১২ টাকার মধ্যে গোলাপ কিনেছি। জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুল প্রতিটি ১০ টাকা করে কিনেছি। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবার বেচাকেনা কম হবে। তাই একটু আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

শাহজাহান আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি ফুল কিনে খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। আজ সব আইটেমের ফুল কিনেছি। গত বছর ১৬ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি হইল। এবার ১০ টাকা করে কিনছি। চাষিরা এবার কম দাম পেয়েছে। তারপরও একেবারে কম না।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘চাহিদা না থাকায় এ বছর বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। করোনার কারণে সারা দেশে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ। যার কারণে ফুলের চাহিদা নেই। গত চারদিনে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে দাবি রাখতে চাই, সম্ভাবনাময় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার রক্ষা ও সম্প্রসারণ করতে সারা দেশে সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত আকারে চালুর রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দিতে হবে।’