বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ট্রায়ালের পণ্য ভারতে পরিবহণ শুরু
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চুক্তির প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের পর টার্মিনাল ট্রাক্টরে করে তা ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ছেড়ে আসা নৌযান (লাইটার জাহাজ) এম ভি রিশাদ রায়হান আজ সোমবার সকাল ৯টায় মোংলা বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে ভিড়ে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় নৌযানটি থেকে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের কাজ। সেখানে খালাস হওয়া কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য নৌযান থেকে সরাসরি টার্মিনাল ট্রাক্টরে ওঠানো হয়। এরপর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সে পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়ক পথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। কলকাতা থেকে নৌযানে আসা দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটি তামাবিল সীমান্ত হয়ে ভারতের মেঘালয়ে যাবে। আর, অপরটি বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামে যাবে।
অ্যাগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি) চুক্তির আওতায় এ ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুদেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ চুক্তি হয়। এরপর প্রথম বারের মতো ট্রায়াল রান হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেওয়া হয়েছিল। তখনকার পণ্য ছিল ডাল ও রড। কিন্তু, করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এ চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
পরে ভারতের পক্ষ থেকে চারটি রুটে ট্রায়াল রানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তবে, আপাতত দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ। এর পরিপ্রক্ষিতেই মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষযয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে ভারতের কলকাতা বন্দর।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ট্রায়ালে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশী নৌযান (কার্গো) এম ভি রিশাদ রায়হান আসে মোংলা বন্দরে। এ নৌযানটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জ্যাক শিপিং। আর সিএন্ডএফ-এর কাজ করছেন সুইফট লজিস্টিক সার্ভিসেস লি.। মার্কস লাইনের এ দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটিতে রয়েছে ইলেক্ট্রোস্টিল কাস্টিংস লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ টন লোহার পাইপ। আর, অন্যটিতে রয়েছে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ টন প্রিফোম।
মোংলা বন্দর জেটিতে পণ্য খালাসের সময় ভারতের সহকারী হাইকমিশনার, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমানসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের সহকারী হাইকমিশনার বলেন, ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি
বাড়ানোর লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অফ কাস্টমস
(জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহণ শুরু হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে হলে আমি বিশ্বাস করি।’