বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম
সরকারের জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণার পরপরই রাজধানীতে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। লকডাউনের ঘোষণায় নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। এদিকে নিত্যপণ্য কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ায় কাঁচাবাজারগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি শিথিল হয়ে পড়েছে।
চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের সঙ্গে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। আলু, পটোল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, ধন্দুল, ঝিঙে, করলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরো বেড়েছে।
সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এ সময় সবজির চাহিদা তুলনামূলক কম ছিল। তবে সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পর সবজির চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে, বৃষ্টির কারণে অনেক সবজিক্ষেতের ক্ষতি হওয়ায় সবজির দাম বেড়ে গেছে।
বোরো মৌসুমের ধান কাটা সবে শেষ হয়েছে। চালের এখন ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে স্বস্তি নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর পাইকারি বাজারে চালের দাম এক দফা বেড়েছিল। তার প্রভাব এখন পড়েছে খুচরা বাজারে। চড়া সবজি, ডিম ও মুরগির দামও। আরেকটু বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। তবে স্থিতিশীল রসুন ও আদার বাজার। কমতির দিকে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম।
বাজারে খোঁজ নিয়ে ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, মসলা, মুরগিসহ ১৬টি পণ্যের দামে পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টি পণ্যের, বাকি ছয়টির কমেছে। এর বাইরে সবজির দামও চলতি সপ্তাহজুড়ে ছিল চড়া।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুদিনে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বয়লার মুরগির দাম। চলতি সপ্তাহে একাধিক দফায় দাম বেড়ে বয়লার মুরগির কেজি আবার ১৭০ টাকায় উঠেছে, যা গত শুক্রবার ছিল ১৪০ টাকার মধ্যে। কেনাকাটা বাড়ায় দাম বেড়েছে সব ধরনের চালের। মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা দুদিন আগে ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে।
দুদিন আগে ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। দেশি রসুনের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক দফা দাম কমে গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছিল। এখন তা আবার বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। রসুনের সঙ্গে দাম বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের। ৪০ টাকা থেকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দেশি রসুনের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আমদানি করা রসুনেরও। ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে। ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে।
গত দুদিনের দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ছোলাও। রোজার পর দাম কমে ৬০ টাকায় নেমে আসা ছোলার কেজি বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে।
এদিকে, সবজি বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, ঝিঙে-চিচিঙ্গা-ধন্দুল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ও উস্তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরছড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুরলতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে রবিউল নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘বর্তমানে অনেক সবজির সিজন না হওয়ায় সেগুলোর বাড়তি দাম রয়েছে পাইকারি বাজারে। তা ছাড়া সবজির দাম আমদানির ওপর নির্ভর করে। বাজারে মালামাল বেশি হলে দাম কমে, মালের সংকট হলে দাম বেড়ে যায়। পাইকারি বাজারের দাম অনুপাতে আমরা খুচরা বাজারে মালামাল বিক্রি করি।’