লাখপতির গল্প

শখ থেকে পেশা, কেক বেচে লাখপতি কাশমিরি

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা কাশমিরি সুলতানা। ছবি : সংগৃহীত

সনদপ্রাপ্ত শেফ প্রশিক্ষক কাশমিরি সুলতানা। শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনলাইনে ব্যবসাও করেন। কেকের ব্যবসা। তাঁর হাতের কেক হালে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনলাইনে কেক বেচে লাখপতি বনে গেছেন এ উদ্যোক্তা।

কাশমিরি সুলতানার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নাম—কাশ্মিরী’স স্টুডিও। এ সেক্টরে কাজ করছেন প্রায় ছয় বছর, ২০১৫ সাল থেকে। সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় কাশমিরির। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ নিয়ে কমবেশি সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁর। নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপাতত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কাশমিরি সুলতানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি কেক, সেভরি ও ডেজার্ট নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া কাশ্মিরী স্টুডিওতে বেকিং ও কুকিংয়ের শর্ট কোর্স করানো হয়ে থাকে। আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট কাস্টোমাইজ কেক। কাস্টোমাইজ কেক বা থিম কেকের চাহিদা এখন অনেক বেশি। ক্লায়েন্টরা এখন নিজের পছন্দের ক্যারেক্টার বা থিমের ওপর কেক নিতে বেশি আগ্রহী। এ জাতীয় কেকের কস্টিং রেগুলার কেকের চাইতে বেশি হয়ে থাকে।’

সফল উদ্যোক্তা কাশমিরি সুলতানা। ছবি : সংগৃহীত

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কাশমিরি বলেন, ‘এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সাপোর্ট পাচ্ছি। তবে প্রথম দিকের জার্নিটা খুব একটা ইজি ছিল না। আমাকে এই সাপোর্টটা অর্জন করে নিতে হয়েছে। আমাদের সমাজে এখনও ধরে নেওয়া হয়, স্বামী যদি ভালো চাকরি করে থাকেন বা গুড ইনকাম সোর্স থাকে, তাহলে কেন শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে।’

পণ্যের মান কীভাবে রক্ষা করেন? কাশমিরি বলেন, ‘আমি একজন সার্টিফায়েড মাল্টি কুজিইন শেফ ট্রেইনার। যেহেতু আমার পণ্য খাবার, তাই পণ্যের গুণগত মান আমি একশ ভাগ রক্ষা করি। খাবার ইনগ্রেডিয়েন্টস কেনা থেকে শুরু করে প্যাকিজিং, প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে থাকি।’

উই-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) ফেসবুক গ্রুপ কাশমিরির উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উই শুধু আমার নয়, বর্তমানে হাজার নারী উদ্যোক্তার এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম। উই-এ জয়েন করার আগে থেকেই আমার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু, তবে তখন কাজটা ছিল শখের বশে। আর উই-এ জয়েন করার পর এটা পেশা-নেশা উভয়ই। উই-এ জয়েন করার পর আসলে আমি আমার কাজ সম্পর্কে আরও সিরিয়াস হই। কারণ, উই উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কোর্স, ওয়ার্কশপের আয়োজন করে, যা একজন মানুষকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এখানে অনেক সফল নারী উদ্যোক্তা আছেন, যাঁরা ইন্সপাইরেশন হিসেবে কাজ করেন। জীবনের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে সাহস, শক্তি প্রয়োজন, তা এখানে প্রতিনিয়ত দেখতে পাওয়া যায়। এককথায়, উই গ্রুপ একজন মানুষকে পরিপূর্ণ হতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়।’

সফল উদ্যোক্তা কাশমিরি সুলতানা। ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর স্মৃতি জানতে চাইলে কাশমিরি বলেন, ‘২০২১ সালের প্রথম দিকে আয়োজিত হয় উই-এর কালার ফেস্ট প্রোগ্রাম, এ প্রোগ্রামের ওপেনিং ফেস্টিভ্যালে যে কেক কেটে উদ্বোধন করা হয়, সেটা আমার বানানো। প্রায় পঞ্চাশ পাউন্ডের কেক ছিল, যা খুব কম সময়ে আমি তৈরি করি। কেকটা দেশীয় সব পণ্য দিয়ে সাজানো ছিল এবং এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমার জন্য। কেকের প্রেজেন্টেশন উপস্থিত অতিথিরা ভীষণ পছন্দ করেছিলেন, যা আমার জন্য বিশেষ প্রাপ্তি। তাই এটা আমার কাছে একটা মধুর স্মৃতি।’

মাসে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়? উত্তরে কাশমিরি জানান, একেক মাসে একেক রকম। তবে মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা আয় তাঁর।

কাশমিরি অনেক কাজে দক্ষ। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্সে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করি। এ ছাড়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কুলিনারি আর্টে ডিপ্লোমা করি। গত পাঁচ বছর ধরে শেফ ট্রেইনার হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি ইনস্টিটিউটে ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করছি। গত তিন বছর ধরে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে) খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে আছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি।’

বলা হয়, অনেকে লাখপতি? আপনি হতে পেরেছেন? উত্তরে কাশমিরি সুলতানা বলেন, ‘জি, আলহামদুলিল্লাহ। লাখপতি হয়েছি। আমার জীবনে সবচেয়ে মধুর স্মৃতি এটি।’ কাশমিরির এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন তাঁর মা-বাবা ও বোন। তাঁর স্বপ্ন, কাশ্মিরী’স স্টুডিও আউটলেট তৈরি করা। গোটা বাংলাদেশেই এর নাম ছড়িয়ে পড়বে, এ প্রত্যাশা তাঁর। কাশমিরির সেই স্বপ্ন পূরণ হোক, এ কামনা সবার।