সারাদিনে এক জোড়া জুতাও বিক্রি হয়নি মিলনের

Looks like you've blocked notifications!

মিলন হোসেন (৩৫) রাজধানীর পান্থপথের (কারওয়ান বাজারের কাছে) ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন। স্থানটাকে অনেকেই ‘জুতাপট্টি‘ বলে থাকেন। করোনাকালের আজও মিলন হোসেন পেটের দায়ে জুতার পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেখানে। কিন্তু সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিনি এক জোড়া জুতাও বিক্রি করতে পারেননি।

শুধু মিলন নয়, সেখানে অন্তত ১৫টি জুতার দোকান বসেছে। এই ১৫ জনের ভেতরে দুজন সারাদিনে এক জোড়াও জুতা বিক্রি করতে পারেননি বলে জানিয়েছে। দুজন দুই জোড়া করে বিক্রির কথা বলেছেন। পাঁচ জোড়ার কম বিক্রির কথা বলেছেন আরো তিনজন। বাকি কয়েকজন ১০ জোড়া থেকে সর্বোচ্চ ১৬ জোড়া জুতা বিক্রির কথা বলেছেন।

আজ শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর পান্থপথের ফুটপাতে এই দৃশ্য দেখা যায়। দেখা যায়, বিক্রেতারা ক্রেতাদের আশায় চেয়ে আছেন কিন্তু ক্রেতা নেই। আর ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষকে দেখলেই জানতে চাইছেন, ‘জুতা লাগবে না ভাই?’

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) এই পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটিতে শহুরে মানুষ ছুটেছেন গ্রামে। শহর মোটামুটি ফাঁকাই বলা চলে। এই পরিস্থিতিতেও যারা শহুরে আছেন তাঁদেরও নেই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার আগ্রহ। কারণ, তাঁদের কাছেও যে পর্যাপ্ত টাকা নেই।

দিন শেষে জুতা বিক্রি করতে না পেরে হতাশ কণ্ঠে মিলন হোসেন বলছিলেন, ‘সারাদিনে এক জোড়াও জুতা বিক্রি করতে পারিনি। খাবো কী? কোনো ক্রেতা নেই। খুব অশান্তি লাগেছে। নিজের বাচ্চাটার জন্য কিছুই কিনিনি এখনো। করোনার ভেতরে বসে থেকে থেকে আর চলতে পারছি না বলে কলাবাগান থানায় গিয়ে দোকান খুলতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তারপর থেকে দোকান খুলি। বিকেল ৪টার দিকে বন্ধ করি। কিন্তু খুলেও লাভ নেই। বিক্রি নেই।’ যদিও তখন বিকেল ৫টা বাজে।

পাশের আরেক বিক্রেতা মো. সেলিম বলছিলেন, ‘সেই সকাল ১০টার পরে এসেছি কিন্তু মাত্র দুই জোড়া বিক্রি করছি। এখন বন্ধ করে দেব। আর ফাউ ফাউ বসে থেকে লাভ নেই। রোববারটা খুলবো, এরপর কয়েকদিন আর খুলবো না। বসুন্ধরা খোলা থাকলে আমাদের বিক্রি হত ভালো। লোকজন নেই, কিনবে কে?’

বিক্রেতা হাসেম আলীর দোকানে জুতা দেখছিলেন মুনসুর আলী। সে সময় হাসেম বলেন, ‘১৬ জোড়া বিক্রি করছি সারাদিনে। কম দামে ছাড়ছি বলে বিক্রি হয়েছে কয়েক জোড়া।’

দোকানে দাঁড়িয়েই মুনসুর আলী বলছিলেন, ‘নিজের জন্য কিছুই কিনবো না। টাকা নেই। অফিস বোনাস দেয়নি। ছেলে মন খারাপ করে বসেছিল তাই এখানে জুতা দেখতে বের হলাম। পছন্দ হইলে আর টাকায় কুলাইলে কাল ছেলেকে নিয়ে আসবো এখানে। আমি দেখতে এলাম আজ।’

বসুন্ধরার এক কোণে চারজন বিক্রেতা জামা প্যান্ট বিক্রি করছেন। কিন্তু তাদেরও বিক্রি নেই বললেই চলে। চারজনের ভেতরে একজন সুমন। সুমন বলেন, ‘সকাল থেকে মাত্র আটটা জামা বিক্রি করছি। বাকিদের আমার চেয়ে খারাপ অবস্থা। মানুষের কাছে টাকাও নেই। কিনছেও না। এবার ঈদটাই মাটি।’