ঈদুল ফিতর

২৫ দোকানে ৫ ক্রেতা!

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভেতর রাজধানীর অধিকাংশ বড় বড় শপিংমল বন্ধ রাখা হলেও খোলা আছে গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেট। মার্কেটটির নিচতলায় শাড়ি ও লুঙ্গির দোকান আছে মোট ৩৭টি। খোলা আছে ২৫টি। বাকি ১২টি বন্ধ। খোলা থাকা ২৫টি দোকানে ক্রেতা আছে মাত্র পাঁচজন! ২০টি দোকানে কোনো ক্রেতাই নেই

আজ রোববার বিকেলে পীর ইয়ামেনী মার্কেটের নিচতলার অধিকাংশ বিক্রেতাকে ক্রেতা ছাড়াই বসে থাকতে দেখা গেছে। দেখা গেছে, কেউ মুখে অথবা মাথায় হাত রেখে বসে আছেন। কেউ আবার ক্রেতা না থাকার সুযোগে একটু ঝিমিয়ে নিচ্ছেন

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মার্কেটের ভেতর রহিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি প্রবেশ করেন। রহিম প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত চার দোকানি ‘আসেন ভাই, এদিক আসেন’ বলে ডাকাডাকি শুরু করলেন। রহিম ‘সমতা শাড়ি কর্নার‘-এ গিয়ে বসলেনএই দোকানের মালিক আব্দুল হাই।

রহিমকে শাড়ি দেখাতে দেখাতে আবদুল হাই এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘সকাল থেকে এক হাজার টাকা করে দুটি শাড়ি বিক্রি করেছি। অথচ, অন্যবার ঈদের আগের দিন অন্তত এক লাখ টাকা বিক্রি করি। জীবনে কখনো এমন মন্দা দেখিনি।’

পীর ইয়ামেনীর ‘কাজী শাড়ি হাউস‘-এর মালিক ওমর ফারুক বলেন, ‘জীবনে কখনো ঈদের সময় এমন অবস্থা দেখিনি প্রথমত গ্রামে মানুষ চলে গেছেন করোনার ভয়ে। আর দ্বিতীয়ত মানুষের কাছে টাকা নেই। সেজন্য ক্রেতাও কম, বিক্রিও নেই। অন্যবারের চেয়ে ৯৫ ভাগ বেচাকেনা কম। সেই সকাল বসে আছি অথচ বিক্রি নেই। এই কনোনার ভেতরেও মার্কেট খুলেছি। খুবই হতাশ লাগছে।’

তবে পীর ইয়ামেনী মার্কেটের এই অবস্থা হলেও গুলিস্তানের ফুটপাতে বসা কয়েকটি দোকানে ভালোই বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মোটামুটি ভালো বিক্রির কথা জানা গেছে।

ইকবাল হোসেন তাঁদের একজন। সকাল ৯টা থেকে রাস্তার ওপরেই বিছানা পেতে পাঞ্জাবি সাজিয়ে বসেছেন তিনি। বিকেল পৌনে ৪টার সময় ইকবাল বলছিলেন, ‘সকাল থেকে ১৫০টির ওপরে পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। যে পাঞ্জাবিই নেবেন, দাম ২০০ টাকা। ভালোই বিক্রি হয়েছে। এত বিক্রি হবে তা আমি ভাবিনি।’

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, ক্রেতা নেই বললেই চলে। খুব কম। তখন বাজে বিকেল ৪টা। মার্কেটের ভেতরে ‘বড় বাড়ি‘ নামের একটি টি-শার্ট আর পাঞ্জাবির দোকানি এমদাদ বললেন, ‘১০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি সকাল থেকে। কিন্তু অন্যবার এই দিনে এক সেকেন্ড বসে থাকার সুযোগ থাকতো না। আর এবার তো বসেই আছি। সাধারণ দিনেও তো অন্তত ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। সেখানে কাল ঈদ! ভাবেন কী অবস্থা। সব এই করোনার কারণে।’

আজিজ সুপার মার্কেট থেকে নিউ মার্কেটের দিকে যেতে দেখা যায়, এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে সেনাবাহিনী। সেখান থেকে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতেই বিক্রেতারা শাড়ি-পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে সব বিক্রি করছেন। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফুটপাতে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হবে না। অথচ, সব মার্কেটের সামনের ফুটপাতের ভিড় জমিয়ে চলছে বিকিকিনি

এদিকে নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট কিংবা গাউসিয়া মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মার্কেট সমিতির লোকজন। যদিও আজ দেখা যায়, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে অন্তত তিনটি দোকান খোলা আছে (গেটের বাইরে থেকে দেখা যায়) বাইরে থেকে গেট বন্ধ রেখে ভেতরে দোকান খুলে রাখা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাবছিলাম কটা টাকা যদি হয়। তাই এসেছি। কিন্তু গেট বন্ধ রেখেছি। কাউকে ঢোকানোর দরকার হলে ঢোকাচ্ছি।’