কৃষি খাতে ভর্তুকি পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
আসছে অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দের তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। আর চলতি অর্থবছরের মতো আসছে অর্থবছরেও এ খাতের ভর্তুকি থাকছে নয় হাজার কোটি টাকা। তবে সারের দাম কমায় এবার ভর্তুকি পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচ কমানো, কৃষিপণ্য সংরক্ষণে ব্যবস্থাপনায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
urgentPhoto
খাতওয়ারি উন্নয়ন বরাদ্দে আসছে বাজেটে কৃষি খাতের জন্য থাকছে চলতি অর্থবছরের বাজেটের মতোই এডিপির মোট বরাদ্দের সাড়ে পাঁচ শতাংশ। গত দুই অর্থবছরের মতো এ খাতের ভর্তুকিতেও এবার আসছে না কোনো পরিবর্তন। অনেকটা অপরিবর্তিতই থাকছে মোট বরাদ্দের অঙ্কও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভর্তুকি গত অর্থবছর নয় হাজার কোটি টাকা ছিল, এবারও তা-ই থাকবে। স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা তো আছেই, তা অব্যাহত থাকবে। উন্নয়ন বাজেটে ৫ শতাংশের ওপরে উন্নয়ন ব্যয় ব্যয়িত হবে। সরাসরি যা কৃষিতে দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়ে পুরোটা বোঝা যাবে না। কৃষির জন্য সহায়ক অন্য যেসব ব্যয় হয়, তাও এর মধ্যে ধরতে হবে।’
বাজেট বরাদ্দে যেমন খুব একটা পরিবর্তন আসেনি, পরিবর্তন আসেনি কৃষকের ভাগ্যেরও। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই বন্যা, মাঝে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর শেষ ভাগে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কৃষিপণ্য। আর বাম্পার ফলনের পর ন্যায্যমূল্য নিয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন বোরোচাষিরা। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢেলে সাজানো উচিত কৃষি খাতের বরাদ্দ।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অনেক নেমে এসেছে। তার ফলে সরকারকে অতটা ভর্তুকি দিতে হবে না। তবে সেই ভর্তুকির টাকা অন্য খাতে না দিয়ে কৃষি খাতে ব্যয় করা যায় কি না, তা দেখতে হবে।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (গবেষণা) ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চিরকালই কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে যেতে হবে? দক্ষতা অর্জন করে কৃষকরা কি উৎপাদন খরচটা কমাবেন না? হ্যাঁ, নতুন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে, পুরোনো ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। সেদিকে কিন্তু নজর দেওয়া হচ্ছে না।’
গত চার দশকে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে নেমে এসেছে সাড়ে ১৬ শতাংশে। আর এ খাতের প্রবৃদ্ধিও এখন সাড়ে তিন শতাংশের নিচে। তবে উৎপাদনের সূচকে কৃষির আকার বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের অবহেলায় কমছে না উৎপাদন খরচ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জেড করিম বলেন, ‘সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে বণ্টন প্রক্রিয়ার উন্নয়নে নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা দরকার। ফসল ঘরে তোলার আগে ৩০ থেকে ৪০ ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত সুবিধা পান না কৃষক। এ ক্ষেত্রে বাজেটে কিছু বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে না, উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই কৌশলটাকে আমাদের এখন মাথায় রাখতে হবে।’
বছর চারেক আগে বাজেটে শস্যবীমার ঘোষণা কাজে আসেনি। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, বোরো চাষির পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বীমা চালু করতে হবে। এ ছাড়া কৃষির এই উপখাত দুটিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।