আদানি-রিলায়েন্সের সাথে সমঝোতা জাতীয় স্বার্থবিরোধী
ভারতের আদানি ও রিলায়েন্স গ্রুপের সাথে যে প্রক্রিয়ায় চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তাকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রতিষ্ঠান দুটির সাথে সমঝোতা স্মারক সই করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।তাঁদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের দাম দেশীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম না হলে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এ ধরনের পদক্ষেপ এখনই নেওয়া হচ্ছে বলে অভিমত প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার।
৬ জুন নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রথম দিনেই ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান আদানি ও রিলায়েন্সের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সাথে এই সমঝোতার কোনো যোগসূত্র ছিল না বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
সমঝোতা অনুযায়ী, আদানি ও রিলায়েন্স মহেশখালীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে। সরকার তাদের কাছে থেকে বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করবে। কিন্তু হঠাৎ করে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই এমন সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আবার দেশে সংকট কাটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে বিশেষ দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে, এই সমঝোতা তার আওতায় হলে তা ভালো ইঙ্গিত নয় বলেও মন্তব্য তাদের।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাঁরা সরকারকে বিভ্রান্ত করছে বলে আমি মনে করি। এই বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকা দরকার। কারণ অযাচিত কোনো বিডিং বা চুক্তি সবসময় জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে হচ্ছে। যেমন আমরা বলতে পারি এশিয়া এনার্জি চুক্তি, কাকফো চুক্তি।’
তবে ভারতের দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মূল চুক্তির সময় দামের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ দেখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। তারা মনে করছেন, দেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার যে দামে বিদ্যুৎ কেনে, ওই দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও একই দামে কিনলে, তা হবে অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘টাটা বা অন্যান্য কোম্পানি এ দেশে আসতে পারে। তাদের এ দেশে আসা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেসব চুক্তি হবে, সেগুলো যেন আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে। সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আর খুব স্বচ্ছভাবে এটা করতে হবে।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতে, ভবিষ্যতের কথা ভাবলে, নিয়মের মধ্যে আটকে থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল হাতে পাওয়া বেশ কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ ২০২১ ও ২০৪১ সাল। আপনারা যারা তরুণ আছেন তাঁদের কথা চিন্তা করে এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং সেই সময়টাকে যদি আমরা সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার করতে চাই তাহলে পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।’
বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে জোর দেওয়া এবং এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই এমন সমঝোতা বলে দাবি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর।

আদানি পাওয়ার লিমিটেড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে আমদানি করা কয়লা। রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি। বিশেষজ্ঞরা আগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলছেন, এ ধরনের চুক্তি শেষ পর্যন্ত ভালো ফল বয়ে আনেনি।

রোকন উদ্দিন