বকেয়া না নিয়ে বিজিএমইএ ভবন ছাড়বেন না বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা!

Looks like you've blocked notifications!
বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ঘেরাও করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি

বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো এলাকার ক্লাসটন অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা। আজ শনিবার দুপুরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

সারা দিন শেষে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিদ্ধান্ত নেয় যে আগামী ২৬ মে তাদের সমস্ত পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত শোনার পর শ্রমিকরা পুনরায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

শ্রমিকরা জানান, এর আগেও মালিকপক্ষ সময় নিয়ে জানিয়েছিল, ৫ মের মধ্যে সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ৫ মে পার হয়ে গেলেও এখনো বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। তাই আবার নতুন করে সময়ক্ষেপণ করায় শ্রমিকরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করেছেন।

ক্লাসটন অ্যাপারেলস কারখানার নারী শ্রমিকরা বিজিএমইএ ভবনের মূল গেটে দাঁড়িয়ে অবস্থান করছেন। ওই ভবন থেকে তাঁরা কাউকে বাইরে আসতে দিচ্ছেন না, ভেতরেও ঢুকতে দিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, বকেয়া টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেউই এখান থেকে যাবেন না।

আওলিয়া বেগম নামের একজন শ্রমিক এনটিভি অনলাইনকে জানান, এর আগেও মালিকপক্ষ মিটিং করে তাঁদের অনেকবার টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়ে ঘুরিয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ একটি সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ৫ মের মধ্যে সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছিল। সেই আশ্বাস অনুযায়ী ৫ মে পার হয়ে গেলেও পাওনা টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হয় নাই। অনেক শ্রমিক ওই তারিখে টাকা পাওয়ার আশায় রংপুর, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, বরিশালসহ অনেক জেলা থেকে এসেছেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে আবার ২৬ তারিখ নতুন করে সময় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

আওলিয়া বেগম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব শ্রমিক টাকা নিতে এসেছেন তাঁদের অনেকের কাছে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো টাকা নেই। এই অবস্থায় কোনোভাবেই শ্রমিকরা সময় দিতে রাজি না। তাই পাওনা না পেয়ে আমরা কেউই এই বিজিএমইএ ভবন থেকে চলে যাব না।’

সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেখা গেছে, বিজিএমইএ ভবনের মূল গেট ঘিরে রেখেছেন কয়েক শ শ্রমিক। সে কারণে বিজিএমইএ ভবনের ভেতরে অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভবন থেকে বের হতে পারছেন না।

জামাল হোসেন নামের অপর আর এক শ্রমিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বকেয়ার সমস্ত টাকা ফিরে না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই এখান থেকে সরে যাব না। এ জন্য যত সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হয়, করব।’

ঘট্নাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা জানান, শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে এখানে অবস্থান করছেন। তাঁরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটাননি। তবে নিরাপত্তার কারণে এখানে বেশ কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর ক্লাসটন অ্যাপারেলস কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই সেটি বন্ধ করে দেয়। মালিকপক্ষের কাছে ৮০০ শ্রমিকের নয় মাসের বেতন-বোনাস বকেয়া আছে। এ নিয়ে গত ৯ মার্চ বিজিএমইএ ভবনে কয়েকজন শ্রমিক নেতার সঙ্গে মালিকপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকে ক্লাসটন অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল হক লিখিতভাবে জানান, ৫ মের মধ্যে সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ৫ মে পার হয়ে গেলেও এখনো বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি।

বাচ্চু মিয়া নামের এক শ্রমিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ৫ মে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। আজ  শ্রমিকরা বিজিএমইএ ভবনে এসে নোটিশ বোর্ডে দেখতে পান মালিকপক্ষ বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য আগামী ২৬ মে পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। তাই সবাই মিলে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

ফরিদা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক বলেন, তিনি ক্লাসটন অ্যাপারেলসে ট্রেইনার পদে চাকরি করতেন। বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিকের সঙ্গে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের বৈঠক চলছে। বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।