বেনাপোল স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় বেড়েছে
গেল অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দরের রাজস্ব বেড়েছে, তার আগের অর্থবছরের তুলনায় তা প্রায় ১১৯ কোটি টাকা বেশি। এই প্রথম বন্দরটিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে ১১৯ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে। এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫ দশমিক ৬১ কোটি টাকা বেশি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৪৭২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
বেনাপোলে নতুন কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ যোগদানের পরপরই রাজস্ব আদায়ে জোর করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা ও মালামাল পরীক্ষণে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব আদায় বেড়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে অনেকাংশে।
সূত্রটি আরো জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু সে সময় রাজস্ব আদায় হয় দুই হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১৫ কোটি টাকা কম।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে মে পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। একই সময়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হযেছে দুই হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার আগের অর্থবছরে দুই হাজার ৪৩৮ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছিল। কিন্তু চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি।
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বর্তমানে কাস্টমস হাউসে আমদানি করা পণ্যের ওপর জোর করে ইচ্ছামতো মূল্য বাড়িয়ে নিয়মের বাইরে গিয়ে জরিমানা আদায় করায় রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, বেনাপোল বন্দরে যেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে, সেই মূল্য সারা দেশের কাস্টমস হাউসে প্রয়োগ করা হলে অবশ্যই বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়বে এবং আরো বেশি রাজস্ব আয় হবে।
বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন জানান, শুধু বেনাপোল বন্দরে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের কোনো কাস্টমস হাউসে বলবৎ নেই।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বেনাপোল বন্দরের পার্শ্ববর্তী ভোমরা বন্দরে কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চাল একশ টন ঘোষণা দিয়ে ১৩০ টন বেশি আমদানি করে সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। ভোমার বন্দরে শুধু ফল আমদানি করে গত বছর সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। কাস্টমসের পক্ষ থেকে মামলা করে সেই ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায় করা হয়েছিল।
বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মোট ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৭৩ হাজার টন, যা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছিল ২২ কোটি ৭৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়নে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনাসহ বন্দরে নতুন নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে অনিয়ম দূর করার কারণে গত চার বছরের তুলনায় এবারই প্রথম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যান্য কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনের তুলনায় একমাত্র বেনাপোলেই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।