কাঁচামরিচের দাম পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে ৭০ টাকা বেশি
রাজধানীর পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকা বেশি দামে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। চার-পাঁচদিন আগে এর দাম ৭০-৮০ টাকা থাকলেও বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টানা বৃষ্টি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা এবং ভারতীয় মরিচ না আসায় কাঁচামরিচের দাম এভাবে বেড়েছে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট দাবি করেছেন। তবে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, এই দাম অযৌক্তিক। পাইকারি বাজারে কম থাকলেও খুচরা বাজারে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি মোকামগুলোতে ১৪০-১৫০ টাকা দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারেই ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দামে খুচরা বিক্রেতারা কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন।
সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে রাজধানীর অন্য খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের খুচরা দোকানগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার চেয়ে তা প্রায় ৪০ থেকে ৭০ টাকা বেশি।
পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের এমন ব্যবধানের কারণ ব্যাখ্যায় খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ভালো পণ্যে ঘাটতি বেশি। তাই কিছু বাড়তি লাভ রেখে তা বিক্রি করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘ভাই আমরা কম দামে মাল আনলে কম দামে বিক্রি করি। আর বেশি দামে আনলে দাম বেশি রাখি। তফাত শুধু দামে। আমাদের এখানে কোনো হাত নেই। দাম কম থাকলে লাভ কম, বিক্রি বেশি –তা আমরা জানি। তবে দাম বেশি থাকলে বিক্রি কম, তাই লাভ বেশি করতে হয়।’
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ খরচ বেশি হওয়ায় কিছুটা বেশি দামেই কাচামরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি কাচা মরিচ আনতে খরচ হতো ১২-১৫ টাকা। এখন লাগছে ১৫-২০ টাকা। এই কারণে দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।
রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজারে ১৬০-২০০ টাকা দরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। পরিমাণে কম কিনলে দাম বেশি পড়ছে বলে দাবি করছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের মতে, গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা। কেবল আবহাওয়া বিরূপ ও সরবরাহ খরচ বেশি –এই কারণে এত বেশি দাম নেওয়াটা অযৌক্তিক বলেই বেশির ভাগ ক্রেতারা মনে করেন।
খুচরা ব্যবসায়ী আলী আহমেদ বলেন, ‘মালের দাম বাড়া আর কমায় আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত নেই। আমারা সকালে মাল আনি, বিকেলের মধ্যে তা বিক্রি করি। কোনো মাল স্টক করতে পারি না। আড়তে মাল কম, চাহিদা বেশি। বন্যা, বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের সাপ্লাই না থাকায় দাম বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর থেকে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার আড়তে কাঁচামরিচ আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সকালে ঝিনাইদহের মোকামে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের পাইকারি দাম ছিল ৯০-৯৫ টাকা। আর ফরিদপুর ও যশোরের মোকামে মরিচের প্রতি দাম ছিল ৯৫-১০০ টাকা।
মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আড়তদার আবুল কালাম বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও বন্যার কারণে অনেক এলাকায় মরিচের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ফলন কমেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম একটু বেশি।’
টানা বৃষ্টির কারণে ভারতের কাঁচামরিচের সরবরাহ কমেছে। অন্য সময় শুধু কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন চার-পাঁচ ট্রাক ভারতের মরিচ সরবরাহ হতো। কিন্তু গত তিদদিনে মাত্র চার ট্রাক কাঁচামরিচ এসেছে। ভারতের মরিচের সরবরাহ বাড়লে এবং বন্যার পানি কমলে ৩০-৩৫ টাকায় মরিচের দাম নেমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর কাঁচাবাজারের প্রধান আড়তের মধ্যে কারওয়ান বাজার ছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুরের আড়তের মাধ্যমে সারা শহরে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কারওয়ান বাজারের দাম নির্ধারণ হয় বলেই জানান ব্যবসায়ীরা।