বাজেটের চালিকাশক্তি বেসরকারি বিনিয়োগ

Looks like you've blocked notifications!

আগামী অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ৭ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আর এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। তাই এই বিনিয়োগ চাঙা করতে ব্যবসায়ীদের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা থাকছে আসছে বাজেটে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বল অবস্থানের কারণে শঙ্কার মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। সার্বিক বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে বিলিয়ন (শত কোটি) ডলার। যার প্রভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ছে, আর ব্যয় বাড়ছে আমদানির। আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির হারও কমে এসেছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এটা খুব প্রেশার ফিল করার মতো কিছু না। এসব পেমেন্ট মিট করার জন্য ইটস প্রাইমারিলি এক্সটারনাল রিসোর্সেস (এটা প্রাথমিকভাবে বাহ্যিক সম্পদ) অ্যান্ড ডোমেস্টিক (অভ্যন্তরীণ) যত দূর তুমি করতে পারো। পারফরমেন্স অব দিস গভর্নমেন্ট ইন দা লাস্ট টেন ইয়ারস ইন টারমস অব মোবিলাইজিং এক্সটারনাল রিসোর্সেস ইজ অ্যাবসোলিউটলি…।’

বিদায়ী অর্থবছরের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানীর জন্য ঋণপত্র খোলার হারে প্রায় ৩০ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের ডলারের সংকটের কারণে ঋণপত্রের নিষ্পত্তির হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবছর ঋণপত্র আমদানি নিষ্পত্তির হারে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকা যথেষ্ট মাত্রায় অবমূল্যায়িত হয়েছে এবং এই মুহূর্তে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখানে ইন্টারফেয়ার না করত তাহলে হয়তো রেটটি আরো বেশি দুর্বলতর হতে পারত। সেটি হয়তো আপাতভাবে রপ্তানিকারকদের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে কিন্তু সামগ্রিকভবে আমদানির বিবেচনায় সেটা কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ার কথা এবং অলরেডি ব্যয়বহুল হচ্ছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে তেল, খাদ্যশষ্য আমদানি করতে হচ্ছে এমনকি সরকারি প্রকল্পের জন্য যেগুলো আমদানি করছে সেগুলো কিন্তু ব্যয়হুল হচ্ছে।’

তাই আগামী অর্থবছরে বেসরকারি খাতকে চাঙা করাই হবে অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। আর সে জন্যই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগমুখী করার চেষ্টা থাকছে বাজেটে। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন করপোরেট ট্যাক্স কমানোর। সেইসাথে ব্যবসায়ীদের বহুল প্রতীক্ষিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বহু স্তর বিশিষ্ট ট্যাক্সের পরিবর্তন আসতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সারর্চাজ আগের মতোই রয়েছে। বাট একটু মোর রিফাইনমেন্ট সেখানে আনা হয়েছে। করপোরেট ট্যাক্স যে হারে ছিল সেটা কমিয়েছি।’

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম)নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘বাজেটে অবশ্যই ঘোষণা থাকা উচিত, এফোরট থাকা উচিত যে কীভাবে আমরা কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনতে পারি। বিনিয়োগকে কমিয়ে আনার জন্য স্পেশাল ইকোনোমিক জোন কয়েকটাকে খুব দ্রুততার সঙ্গে যেন তারা বাস্তবায়িত হয় সেভাবে উদ্যেগ নেওয়া। পাশাপাশি ইউলিটিজ যে গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটির যে নতুন কানেকশনগুলো নতুন বিনিয়োগকারীরা কীভাবে পাবেন সেগুলো জায়গায় খুব জোরদার নজর দেওয়া দরকার।’

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ চাঙা করতে অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ এবারের বাজেটেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে শুধু বরাদ্দই নয়, পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নের প্রতীক্ষায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। তাই এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন যত দীর্ঘায়িত হবে বিনিয়োগও দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।