বিশ্ববাজারে তেলের দাম ২২ টাকা, নামবে ১০-এ!
যেন পাল্লা দিয়ে কমছে তেল ও সোনার দাম! কিন্তু দেশের বাজারে তার তেমন কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এবার বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, প্রতি ব্যারেল (১৫৯ লিটার) অপরিশোধিত তেলের দাম এক হাজার ৫৬৫ টাকা বা ২০ ডলারে নেমে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এক লিটার তেলের দাম দাঁড়াবে প্রায় ১০ টাকা।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইনে গত শুক্রবার গোল্ডম্যান স্যাকসের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় জ্বালানি তেলের দাম ২০ ডলারে নেমে যেতে পারে। অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণের ভিত্তি ছাড়া শুধু বাড়তি উৎপাদন ও সরবরাহের কারণে তেলের দাম এত নিচে নেমে যেতে পারে। এতে মোটরবাইকের মালিকরা অনেক সঞ্চয় করতে পারলেও অনেকে বেকার হয়ে যেতে পারে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা বলছেন, ধারণার চেয়ে অনেক বেশি তেল সরবরাহ হচ্ছে। ২০১৬ সালেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ২০ ডলারে নামতে পারে।
ওপেকভুক্ত দেশগুলোর তেল উৎপাদন বাড়ানো ও ওপেক-বহির্ভূত দেশগুলোর চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে তেলের অতিরিক্ত মজুদ আরো দীর্ঘমেয়াদি হবে। এ কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম পড়বে। চলতি বছর তেলের দাম ১৫ শতাংশ কমেছে।
লন্ডনভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মার্কিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন বলেন, ‘তেলের দাম আরো কমলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। তবে তেল শিল্পের জন্য উদ্বিগ্নের কারণ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটিতে জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়েছে ২৬ লাখ ব্যারেল। যদিও এর আগে তা নয় লাখ ৩৩ হাজার ব্যারেল বাড়ার প্রত্যাশা করা হয়। বর্তমানে দেশটিতে জ্বালানি তেলের মজুদ রয়েছে ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল।
গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে, ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, ইরাক ও ইরান তেলের সরবরাহ আরো বাড়াতে পারে।
অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে ওপেকভুক্ত দেশ। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইরান তাদের মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনে করছে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসের পর থেকে অপরিশোধিত তেলের দামে নিম্নগামী প্রবণতা রয়েছে। আজ রোববার এক ব্যারেল তেল ৪৪ ডলার ৬৩ সেন্ট লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে এক লিটার তেল লেনদেন হয়েছে প্রায় ২২ টাকায়।
বিশ্বব্যাংক গত ফেব্রুয়ারি মাসের আন্তর্জাতিক বাজারদর ধরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফার একটি হিসাব তৈরি করেছে। সে সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের বেশি। ওই সময়ে প্রতি লিটার অকটেন ও পেট্রলের উৎপাদন ব্যয় ছিল ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা। গ্রাহকের কাছে তা বিক্রি করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৯ ও ৯৬ টাকা। বিপণন কোম্পানি ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কমিশন বাদ দিয়ে বিপিসির মুনাফা হচ্ছে ৩৫ টাকা ৪৯ পয়সা। একইভাবে প্রতি লিটার কেরোসিনে বিপিসির মুনাফা হচ্ছে ১৩ টাকা ৭৭ পয়সা, ডিজেলে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা, ফার্নেস তেলে ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা এবং প্রতি লিটার জেট ফুয়েলে (বিমানের জ্বালানি) বিপিসির মুনাফা হচ্ছে ১৮ টাকা ৭৫ পয়সা।
আবার একই সঙ্গে সরকারও এ থেকে কর হিসেবে আদায় করছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। যেমন- অকটেন ও পেট্রলে সরকার প্রতি লিটারে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হিসেবে আদায় করছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা এবং বাকি ডিজেল থেকে শুরু করে বাকি পণ্যে প্রতি লিটারে কর নিচ্ছে আট টাকা ৩২ পয়সা।
এত মুনাফার পাশাপাশি সরকারের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে ভর্তুকি বাজেট থেকে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেলে সরকারের ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অথচ সর্বশেষ হিসাবে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় সবদিক থেকেই সরকারের লাভ ও সুবিধা বেড়েছে। অথচ ভোক্তার সাশ্রয় হয়নি এক টাকাও।