সম্পদের চেয়ে দায় বেশি আজিজ পাইপসের

Looks like you've blocked notifications!

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপসের মোট সম্পদের চেয়ে দায় প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। ফলে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা অর্থ রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া হিসাব বছরে আজিজ পাইপের দীর্ঘমেয়াদি দায় (মেয়াদি ঋণ ও বিলম্বিত কর) দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৯০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর চলতি দায় ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, অর্থাৎ মোট দায় ৬২ কোটি নয় লাখ টাকা।

কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে, গত হিসাব বছর শেষে মেয়াদি সম্পদ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং চলতি সম্পদ ছিল ২৫ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৪১ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

কোম্পানিটির সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে এক টাকা ছয় পয়সা। তবে আগের হিসাব বছরের একই সময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২১ পয়সা। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪০ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল চার পয়সা।

প্রায় এক যুগ লভ্যাংশ না দেওয়া এ কোম্পানি শেয়ারবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ ২০০১ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির ৪৮ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫২ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার।
২০১৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানি শেয়ারপ্রতি প্রকৃত দায় দাঁড়ায় ৫০ টাকা ৮৭ পয়সা। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তা ছিল ৪৯ টাকা ৯৯ পয়সা।  
গত এক মাসে প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। আজ রোববার লেনদেন শেষে এর দাম দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ১০ পয়সা।
শেয়ারপ্রতি লোকসানে থাকার পরও গত এক মাসের বেশির ভাগ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পরিমাণ কম। এর কারণে এ শেয়ার নিয়ে অনেকেই নানাভাবে কারসাজি করছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। ফলে আজিজ পাইপে বিনিয়োগ করা অনেক বিনিয়োগকারী শঙ্কায় রয়েছে।

কোম্পানিটির গত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষক হক শাহ আলম মনসুর অ্যান্ড কোং। নিরীক্ষক তাঁর প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে উল্লেখ করেন, উৎপাদনক্ষমতার সম্পূর্ণ ব্যবহার না করা গেলে অনিশ্চয়তায় পড়বে কোম্পানিটি। আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন কমেছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট উৎপাদনক্ষমতার মাত্র সাড়ে ৩২ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। ২০১৩ সালে উৎপাদন ক্ষমতার ৩৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবহার হয়।

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো করতে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে অস্তিত্বের অনিশ্চয়তায় পড়বে। উৎপাদন না বাড়লে দায় পরিশোধ কঠিন হবে। মূলত কোম্পানির ভবিষ্যতে টিকে না থাকার ইঙ্গিত করে। কোম্পানির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয়টি অনিশ্চিত বলে মত দিয়েছেন নিরীক্ষক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ড. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘উৎপাদন হলো কোম্পানির প্রাণ। উৎপাদন কম হলে লোকসান হবেই। এ ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে ডিএসই তালিকা থেকে সরিয়ে ওটিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু এটা কোনো সমাধান না। বিনিয়োগকারীকে যাচাই করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। লোকসানে থাকা ও কম মূলধনের কোম্পানির আলাদা মার্কেটের কাজ চলছে। এটা হলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরের কারসাজি অনেকাংশে কমে আসবে।’

আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব মো. নুরুল আফসার বলেন, ‘বাজারে আমাদের সুনাম আছে। কিন্তু চলতি মূলধনের অভাবে কাজের দক্ষতা ও ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারছি না। বর্তমান উৎপাদনে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্রেক ইভেন্টে রাখতে কমপক্ষে ২০০ টন উৎপাদন দরকার। এখন উৎপাদন মাত্র ১০০ টন।’

নুরুল আফসার আরো বলেন, ‘তিনটি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার দায়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের মামলা চলছে। নতুন কোনো ঋণের সংস্থান করা যাচ্ছে না। ঋণ পুনর্বিন্যাসে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
কোম্পানি উৎপাদন বিভাগ জানায়, বর্তমানে কোম্পানিটি মূলধনের অভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে মোট পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার বড় অংশই ব্যবহার হচ্ছে না। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। কোম্পানির দুর্বলতার কারণে মাঠপর্যায়ের স্থানীয় সরবরাহকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।