লবণের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা
দেশে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবণের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর আমদানির ক্ষেত্রেও রয়েছে বাধা।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আয়োডিনযুক্ত (ত্রিপল রিফাইন্ড) লবণ কোম্পানিভেদে ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর দাম ১৫ দিন আগে ছিল ২৫ টাকা। প্যাকেটজাত সাধারণ আয়োডিন লবণ ২৩-২৫ টাকা ও সাধারণ খোলা লবণ কেজি ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রতি কেজি লবণের দাম যা ছিল, এখন তার চেয়ে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে দাম দুই-তিন টাকা কমতে পারে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলার ইউসুফ আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে লবণ সরবরাহে ঘাটতি ছিল। ডিলারদের চাহিদামতো লবণ দিতে পারছে না মিল। এ কারণে দাম বেড়েছে। ১৫ দিন আগে প্রতি ব্যাগ (২৫ কেজি) আয়োডিন লবণের দাম ছিল ৫০০ টাকা। এখন এর দাম ৭০০ টাকা। শুধু পাইকারি বাজারেই কেজিতে দাম বেড়েছে আট টাকা। এ সুযোগে খুচরা ব্যবসায়ীরাও কিছুটা দাম বাড়িয়েছেন।
ইউসুফ আলী আরো বলেন, অপরিশোধিত লবণের সরবরাহে সংকট ছিল। নভেম্বরে বৃষ্টি হওয়ায় ভালো উৎপাদন হয়নি। এ জন্য সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি হয়। প্রধানত মার্চ থেকে মে মাস লবণ উৎপাদনের মৌসুম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লবণের দাম কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে উৎপাদিত লবণ ভোক্তার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে লবণের ঘাটতি পূরণে আমদানি করতে হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবমতে, প্রতিবছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টন। ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে লবণের উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ লাখ টন। দেশে লবণের ঘাটতি ছিল প্রায় সাড়ে চার লাখ টন।
বিসিকের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ২২৬ টন। ডিসেম্বরে উৎপাদন ছিল ৬৪ হাজার ৭৭৬ টন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষায় অনুমতিসাপেক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এর বিপরীতে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানির অনুমতি দিতে সরকার গড়িমসি করার কারণে চাহিদা অনুযায়ী লবণ সরবরাহ করা যায়নি। লবণের দাম বাড়ার পেছনে এটিও একটি কারণ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আয়োডিনযুক্ত লবণের এজেন্ট মো. খোরশেদ আলম বলেন, গত পাঁচ বছরে লবণের দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এখন কারণ ছাড়াই প্রতি কার্টন (২৫ কেজি) সাধারণ আয়োডিন লবণে দাম বেড়েছে ২০০-২২০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে আট-নয় টাকা।
মোল্লা সল্টের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. শামীম আহমেদ বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে লবণের দাম কমবে। আগের দামে কেনা লবণের স্টক শেষ হলেই ভোক্তারা এর সুফল পাবেন। কাঁচামালের মজুদে ঘাটতি পড়ায় এমনটি হয়েছে। গত বছর দেশে লবণের উৎপাদন কম ছিল। নভেম্বর থেকে উৎপাদন বাড়ছে। নতুন পণ্য বাজারে আসা শুরু হয়েছে।
শামীম বলেন, বর্তমানে বাড়তি দামেই মোল্লা সল্টের পণ্য বাজারে যাচ্ছে। এখন মোল্লা সল্টের প্রতি কেজি লবণ ১৭ টাকা থেকে বেড়ে ২৪ টাকা হয়েছে। আর ২৫ টাকা কেজির লবণ বর্তমানে ৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ শেষে দাম কিছুটা কমবে।
পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ও বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, এবার লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। এর কারণেই মূলত লবণের দাম বেড়েছে। জাতীয় লবণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের ঘাটতি মেটাতে সাড়ে চার লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মাত্র এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ফলে এখনো ঘাটতি রয়েছে আরো সাড়ে তিন লাখ টন।
পরিতোষ বলেন, ‘জাতীয় লবণ কমিটির সিদ্ধান্তকে ভ্রূক্ষেপ না করে কাদের সুবিধা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমনটি করেছে, তা জানা নেই। আজকের এ পরিস্থিতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। এমন সিদ্ধান্তের কারণে মিল মালিক বা চাষি কেউ লাভবান হয়নি। মূলত মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিসিক, মিল মালিক সমিতি, চাষি সমিতিসহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে জাতীয় লবণ কমিটি গঠন করে।