মসলার সরবরাহ বাড়তি, দামে স্বস্তি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/02/17/photo-1455697165.jpg)
খুচরা ও পাইকারি বাজারে গরম মসলার চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বাড়তি রয়েছে। এতে অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল রয়েছে মসলার দাম। এ নিয়ে আমদানিকারকরা উদ্বিগ্ন হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরপতনের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারেও।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, দেশে বৈধভাবে মসলা আমদানি করা হচ্ছে। তবে অবৈধভাবেও মসলা দেশের বাজারে আসছে। এতে সরবরাহ বেড়েছে। তবে তেমন ব্যবসা করতে পারছে না আমদানিকারকরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়েছে। ফলে গরম মসলার চাহিদা বেশি ছিল। তবে তখনো সব মসলার দাম স্থিতিশীল ছিল। চলতি মাসের শুরু থেকে মসলার দাম কমতির দিকে রয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, আমদানি করা মসলার মধ্যে প্রায় ১৫ ধরনের এলাচ পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচের দাম মানভেদে ৯০০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি দারুচিনি ২৫০ টাকা, লবঙ্গ ৮৫০-৯০০, গোলমরিচ ৯০০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরা প্রকারভেদে পাঁচ-ছয় ধরনের হয়ে থাকে। পণ্যটি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শিগগিরই মসলার দাম বাড়বে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, বছরের এ সময়ে দেশে ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসব তেমন হয় না। ফলে এর কিছুটা প্রভাব মসলার বাজারে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ কোনো সমস্যা না হলে মসলার দাম তেমন বাড়ে না। বছরের শুরুতে উৎপাদনকারী দেশগুলো মসলার সরবরাহ বাড়িয়েছে, তবে বাজারে চাহিদা কম। এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী রাইসুল ইসলাম বলেন, এলাচ, জিরা, লবঙ্গসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমা নিয়ে বিপাকে আছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। কারণ, বর্তমানে মসলার চাহিদা কমছে। মজুদ পণ্য বিক্রি করতে না পারলে লোকসান হবে। ওজনের ঘাটতির সঙ্গে বাজারের দামের ভারসাম্য আনতে হবে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এলাচের বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে আফগানিস্তানের এলএমজি ৯৫০ ও জেবিসি ৯৩০-৯৪০ টাকা করে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দারুচিনি ২৪৫-২৬৫ ও লবঙ্গ ৮২০-৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিপ্রতি গোলমরিচ ৯০০ টাকা, জয়ফল ৪৫০, জয়ত্রী এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে জিরা, দারুচিনি ও এলাচই বেশি বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মসলা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মসলা উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। অনেক দিন থেকে দাম স্থিতিশীল আছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা নিম্নমুখী।’
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত ভারত থেকে মসলা আমদানি করে না। ভারতেও তেমন মসলার উৎপাদন হয় না। আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় ভারতের আমদানি করা পণ্য বাংলাদেশে চোরাপথে প্রবেশ করে। সাধারণত জিরাই বেশি আসে।’
ভারতে কোনো লবঙ্গ উৎপাদন হয় না। দেশটিতে লবঙ্গের ওপর শুল্ক নেই বললেই চলে। ফলে ভারতে লবঙ্গের দাম কম। এই পণ্য অবৈধ্যভাবে দেশে আসছে।
পাচার কমাতে সরকারকে আমদানি শুল্ক কমানোর আহ্বান জানান এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পাচার বন্ধে অনেক প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছি। প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হলে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা থাকবে না। সরকারের রাজস্বও বাড়বে না। কারণ, আমরা ৬২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মসলা আমদানি করি। তবে চোরাপথে আসা মসলার সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। পাচার হওয়া মসলা ঠেকানো না গেলে বৈধ ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়বেন।’
আমদানি করা মসলা শুধু ঢাকা শহর ও আশপাশের জেলায় সরবরাহ করা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, দূরের জেলা ও সীমান্তবর্তী জেলায় কোনো মসলা ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে যায় না। পাচার হওয়া মসলা দিয়ে এসব জেলার চাহিদা মেটানো হয়।
উল্লেখ্য, দেশে অধিকাংশ গরম মসলা আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে চীন, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকেই সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের মসলা সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে দেশের বাজারে প্রবেশ করে। আমদানি করা মসলা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে খাতুনগঞ্জ হয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।