হরতালের কারণে কিশোরগঞ্জে মাড়াই কল শিল্পে বিপর্যয়

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জে একটি কারখানায় ধান মাড়াই কল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

দেশের ধান মাড়াই কল নির্মাণ কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই কিশোরগঞ্জে গড়ে উঠেছে। কিন্তু লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে এই শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরবরাহে বিঘ্ন ও পরিবহন খরচ বাড়ায় এই শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বাদল রহমান বলেন, ‘চলমান হরতাল-অবরোধে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব শিল্পে সরকারের পক্ষ থেকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। বিশেষ সহায়তা ছাড়া ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না।’ 

ব্যবসায়ীরা জানান, মাড়াই কল নির্মাণের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের দুই হাজারের বেশি শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। গত প্রায় ২০ বছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চেষ্টায় এ জেলায় গড়ে উঠেছে ১০-১১টি ছোট-বড় মাড়াই কারখানা। এখান  থেকে উৎপাদিত মাড়াই কল সরবরাহ হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাষিদের কাছে। তবে সম্ভাবনাময় এ শিল্প দীর্ঘ দিন ধরে চলা হরতাল-অবরোধে বিপাকে পড়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মালিক-শ্রমিকরা।
 

 

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারিজ সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং কিশোরগঞ্জর সতাল এলকার আওলাদ মাড়াইকল কারখানার স্বত্বাধিকারী শেখ মো. আসাদুজ্জামান খোকন ১৫ বছর আগে তাঁর প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।  তিনি  বলেন, ‘বর্তমানে ২০০ শ্রমিক কাজ করছে আমার কারখানায়। তিন ধরনের মাড়াই কল নির্মাণ করা হয় আমার কারখানা থেকে। এর মধ্যে ৪২ ইঞ্চি সাইজের চলনা মাড়াই কলের উৎপাদন খরচ ৩৮ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪০ হাজার টাকায়। তবে ৪০ ইঞ্চি সাইজের মাড়াই কলটির চাহিদাই বেশি। এর উৎপাদন খরচ ১৯ হাজার টাকা, যা বিক্রি হয় ২১-২২ হাজার টাকায়। গত বছর আড়াই হাজার মাড়াই কল বিক্রি করেছি। এবার তিন হাজার মাড়াই কল উৎপাদন হয়েছে। তবে চলমান মৌসুমেও উৎপাদিত সব মাড়াই কল বিক্রি করতে পারব কি না— তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।’
 
বছরের এ সময়েই ধান মাড়াই কল বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিছু দিন পরই শুরু হবে বোরো ধান কাটার মৌসুম। তাই কারখানাগুলোতে পুরোদমে শুরু হয়েছে মাড়াই কল নির্মাণ। এ জন্য মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে চরম ব্যস্ততা।
 
আসাদুজ্জামান খোকন বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পরিবহন সংকট ও খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি রড ও রংয়ের দামও আগের বছরের চেয়ে বেশ বেড়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে ধার-দেনা করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন তিনি। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে।’ 

আসাদুজ্জামান খোকন জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে প্রতি মাসে এখানে উৎপাদিত দেড় হাজার ধান মাড়াই কল হয়। কিন্তু চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গত এক মাসে মাত্র ৩০০ মাড়াই কল বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। 

 

কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পরিবহন সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জোগাড় করতে খরচ বেড়েছে। আর উৎপাদিত মাড়াই কল বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহন পেলেও নিরাপত্তার ভয় থেকে যায়। বিক্রি না করতে পারায় বিপুল মাড়াই কল কারখানাগুলোতে পড়ে আছে। 
 
চর শোলাকিয়া এলকার রূপালী মাড়াই কল কারখানা মালিক আল-আমিন ২০০১ সালে তাঁর কারখানা স্থাপন করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তাঁর কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। গত বছর ৫০০ মাড়াই কল বিক্রি করেন। এবার ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু রড, রংসহ বিভিন্ন মালামালের দামের পাশাপাশি শ্রমিকের বেতনও বেড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার মালামাল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় মাড়াই কল নির্মাণেও ব্যাঘাত ঘটেছে।
  
আর্থিকভাবে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বলে জানান কারখানার মালিকরা। এতে  একদিকে যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে, তেমনি সমস্যায় পড়ছেন শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ নিয়েও। 

একটি কারখানা শ্রমিক আবদুল্লাহ জানান, বেতন দিতে না পারায় মালিক তাকেসহ আরো অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করে দিয়েছেন।
 
শ্রমিক সোবহান মিয়া বলেন, ‘বেতন না পেলেও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। আমার মতো আরো অনেকেরই একই অবস্থা।’