জ্বালানি আমদানি বাড়াবে সরকার
দেশের শিল্প খাতের উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন করতে পাশের দেশ থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস আমদানি বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী।
আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্প খাতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে একশটি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)’ স্থাপন করেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ইপিজেড/এসইজেডসমূহে সকল ধরনের সেবা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদান করবে।’
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘জ্বালানি খাতে অর্থ বরাদ্দকে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণে বেকারত্ব দূর করতে যে ভর্তুকি দেওয়া হতো তা এ খাতে দিলে উৎপাদন বাড়বে, বেকারত্ব কমবে।’
তৌফিক-ই-ইলাহী আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় গভীর সমুদ্র এলাকায় কূপ খননে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ কমেছে। তারপরও সরকার সমুদ্র এলাকায় নতুন কূপ অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে। দেশের নতুন শিল্প এলাকাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে আলোচনা চলছে।’
সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, অনেক উদ্যোক্তা এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানার অবকাঠামো উন্নয়নসহ যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। সারা দেশে এ ধরনের দুই হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানাগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংযোগ প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
হোসেন খালেদ আরো বলেন, ‘শিল্প-কারখানাগুলো সচল রাখলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অর্থনীতি গতিশীল হবে। ইপিজেড/এসইজেড অঞ্চলের নিকটবর্তী স্থানগুলোতে বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ স্থাপন করলে কম খরচে শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’
ডিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৮% হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্প খাতের অবদান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প খাতের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রাখতে এ খাতে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মুর্শেদ বলেন, ‘জ্বালানির মূল্য পূর্বের মত কমানো সম্ভব নয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে তা সমন্বয় করতে হবে। বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো প্রয়োজন। গ্যাসের সীমাবদ্ধতার কারণে বিকল্প জ্বালানি উৎসের প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার।’ জ্বালানি আমদানিকে নিরুসাহিত করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ উল্লেখজনক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে শিল্প খাতের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন।’
মোহাম্মদ তামিম আরো বলেন, ‘রপ্তানির বড় অংশ নির্ভর করে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। এখন ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর গুরুত্ব প্রদান জরুরি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্প খাতের অগ্রগতি অর্জনে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ ও জমির দুষ্প্রাপ্যতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।এ সমস্যা দূর করতে হবে।
সেমিনারে ডিসিসিআই পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান, মোক্তার হোসেন চৌধুরী, প্রাক্তন সহসভাপতি সৈয়দ তৌফিক আলী, এম আবু হোরায়রাহ, হোসেন এ সিকদার, মহাসচিব এ এইচ এম রেজাউল কবির উপস্থিত ছিলেন।