ঢাকার কেরানীগঞ্জে বেসরকারি শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠায় আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এ প্রকল্পে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বা ৫৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আসবে। এর প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশি প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করবে বলে আরিশা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক জানান।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আরিশা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হকের কাছে প্রকল্পের প্রাক-যোগ্যতা সনদ প্রদান করেন।

সাংবাদিকদের আসলামুল হক বলেন, ‘বেজার আওতায় আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানি চলতি মাসের শেষ দিকে নয় কোটি ডলারের চুক্তি করতে পারে।’

আসলামুল হক বলেন, ‘আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে দূষণমুক্ত সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এরই মধ্যে এখানে ৩২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি পোশাক ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট উৎপাদনকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। এখানে ২০০ শিল্প কারখানার জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিকল্পিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১০টি উদ্বোধন করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করা হবে। ১০টি অঞ্চলের কাজ চলছে। এ ছাড়া ২২টি রয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের অধীনে। আর পাইপলাইনে রয়েছে সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি।’

বেজার চেয়ারম্যান বলেন, ‘দৈনিক ১০ থেকে ১২ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী বেজা আসছেন। বিনিয়োগকারীরা যাতে দ্রুত বিভিন্ন তথ্য পান, সে জন্য চলতি মাসেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে।’

পবন চৌধুরী আরো বলেন, ‘বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজ করতে আইনের বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে জমি লিজ দেওয়ার মেয়াদ ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫০ বছর, লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর ও পৌর এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিধান করা হয়েছে। তবে আইনের অধীনে সব কোম্পানিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের বসিলা ও কেরানীগঞ্জ সংযোগ সেতু (তৃতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু) বুড়িগঙ্গা নদীর মোহনায় কেরানীগঞ্জের ওয়াশপুর মৌজা ও সাভারের শ্যামলাপুর মৌজায় ৫০ একরের বেশি জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ক্রমান্বয়ে প্রকল্প এলাকা বেড়ে দেড়শ একরে উন্নীত হবে।  

আরিশা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে আরিশা গ্রুপের মালিকানাধীন ৫০ দশমিক ৮১ একর জমির ওপর বেজা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দিয়েছে। ২০০টি শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য চাহিদা অনুযায়ী স্থান বরাদ্দ থাকবে। প্রকল্পে আগামী আট বছরে ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

রাশিয়ার একটি বিমান ও হেলিকপ্টারের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, জাপান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের আইসিটি, ফুটওয়্যার, অ্যাগ্রো ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছে আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।