পোশাকশিল্পে বিদেশিদের আস্থা ফিরছে : বিজিএমইএ
সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাকশিল্পকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এতে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরছে, তাই এ খাতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজার ধস দেশের রপ্তানি খাতের ভাবমূর্তিতে যে ধস নামিয়ে দিয়েছিল, তার উত্তরণ ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে সময় হাজারো শ্রমিকের প্রাণহানির পর, পোশাকশিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হাতে নেওয়া হয় ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান। পাশাপাশি কাজ শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট অ্যাকর্ড আর অ্যালায়েন্সও।
বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘ইলেকট্রিফিকেশন করার আগে আমরা এখন চিন্তা করি বাসবারের ক্যাপাসিটি কেমন হবে, ওয়্যারের মাপ কেমন হবে। আগে কিন্তু আমরা জানতাম না। আমরা ধারণার বশবর্তী হয়ে কাজগুলো করতাম। এখন আমরা অনেক কিছু শিখেছি যে কারণে আগামী দিনে আমরা বেনিফিটেড হব।’
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৬-এর শেষের মধ্যে আমরা আশা করি, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের যে কারখানাগুলো আছে, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিমুক্ত হয়ে যাবে। তবে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের আন্ডারে যে কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে, সে কারখানাগুলোর জন্য দেরি হবে।’
গত তিন বছরে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সসহ ন্যাশনাল ট্রাই-পার্টিট প্ল্যান অব অ্যাকশনের আওতায় দেশের তিন হাজার ৬০০ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনে প্রায় সব কারখানায়ই কোনো না কোনো ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে অগ্নি ও বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত ত্রুটিই বেশি। এ ছাড়া কাঠামোগত বড় ত্রুটির কারণে বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে ৩৯টি পোশাক কারখানা। বাকিদের ত্রুটি শনাক্ত করে দেওয়া হয়েছে সংস্কারের পরিকল্পনা। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে।
এ কে আজাদ বলেন, ‘যখন সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের, তখন কিন্তু কাস্টমাররা কনিফিডেন্টস পাচ্ছে। আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে এবং ব্যয়বাহুল্য, কিন্তু তার পরও তাদের সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে কাস্টমারের কনফিডেন্সটা ফিরে পাচ্ছি।’
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রোথ যেটা নেগেটিভ ছিল রানা প্লাজার পরে, সেটা কিন্তু আস্তে আস্তে পজিটিভ হচ্ছে। কিছুটা হলেও ইমেজ ক্রাইসিসের উত্তরণ হয়েছে এবং বায়ারদের আস্থা অনেকটাই ফিরে এসেছে।’
সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটাকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিদেশ থেকে চাপিয়ে দেওয়া শ্রমমানের শর্ত, কারখানার পরিবেশের শর্ত এগুলো এখন দেখাতে হচ্ছে যে পরিপালন করা হচ্ছে। আগে থেকে সতর্ক থাকলে এতটা খেসারত দিতে হতো না। আমরা তো শুরু করেছিলাম সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি কারখানা। সে সংখ্যা হয়তো বাড়বে না, কমেও যেতে পারে। কিন্তু সেগুলোর আকার বাড়বে, সেগুলোর মান গুণগতভাবে বাড়বে।’
দেশে এখনো অনেক কারখানাই বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য না হওয়ায় এগুলো পরিদর্শনের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। তাই সেগুলোর ব্যাপারেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।