রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৩ টাকা

Looks like you've blocked notifications!
এগিয়ে চলেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ছবি : এনটিভি

সরকারের বিদ্যুতের দাম আবারো যখন বাড়ানোর পরিকল্পনা সাধারণ মানুষকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে তখন আশার কথা শোনাচ্ছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হলে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে মাত্র ৩ টাকা।

আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এ কথা জানিয়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। আগামী ২০২২ সাল নাগাদ পুরো দেশ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল বিকেলে পাবনায় প্রকল্প অফিসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। সেই সময় সাংবাদিকদের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখানো হয়। দেশের ৭৩টি প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়ার ১২৯ জন সিনিয়র সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসন এই সরেজমিন পরিদর্শনে অংশ নেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদপ্তর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই সরেজমিন পরির্দশনের আয়োজন করে।

সেই সময় জানানো হয়, ২০২২ সালে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৩ সালে যোগ হবে আরো এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়ে এই বিদ্যুৎ পাশের দেশগুলোতে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করে জানা যায়, এটি বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত ফোর জি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো, সাইট ডেভেলপমেন্ট, মাটি পরীক্ষা, কন্সট্রাকশন ল্যাবরেটরিসহ প্রথম পর্যায়ের ৮০ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ে আণবিক চুল্লি বা রি-অ্যাকটর বসানোর কাজ শুরু হবে। রি অ্যাক্টর বসানোর কাজ শেষ হলে আগামী ২০২২ সালে প্রথমে এক হাজার ২০০ মেগওয়াট এবং তার পরের বছর ২০২৩ সালে আরো এক হাজার ২০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

কর্মকর্তারা জানান, এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়বে মাত্র ২ টাকা ৯০ পয়সা। যা ৩ টাকা দরে বিক্রি করলেও প্লান্ট স্থাপন ও পরিচালনায় কোনো লোকসান হবে না। এই প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবন শক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৬২ হাজার ১৫৪ টাকা। (১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এর ৯০ শতাংশ ব্যয় বহন করবে রাশিয়া সরকার। মাত্র ১০ শতাং টাকা খরচ করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

প্রেস ব্রিফিং থেকে জানানো হয়, পাঁচ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তাবেষ্টনি থাকায় এই প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটনার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেও তবে তাতে কোনো ক্ষতি হবে না। শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবিলায় এই রি-অ্যাকটর সক্ষম। জাপানের ফুকুসিমা দুঘর্টনার কথা মাথায় রেখে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্লানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিহীন নিরাপদে থাকবে এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। পৃথিবীর ৩২ দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লির মধ্যে এটি হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এবং ফোর জি ক্ষমতা সম্পন্ন। 

সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, পারমাণবিক চুল্লিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার পর প্রকল্পের যাবতীয় বর্জ্য রাশিয়া বিমানে করে ফেরত নেবে। এ জন্য আগামী বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে চুক্তি করা হবে।

এ সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান জানান, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২২ সালে বিশ্বের ৩২তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে নাম লেখাবে। দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্তের রেকর্ড অর্জনে সক্ষম হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদিত দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে প্রতি বছর এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তের রেকর্ড অর্জন করবে বাংলাদেশ।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সচিব ও অন্য কর্মকতারা জানান, পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ কমে গেলেও আণবিক চুল্লি পরিচালনে পানির কোনো সমস্যা হবে না। এখানে দৈনিক মাত্র এক হাজার ৭৫০ কিউবিক মিটার পানির প্রয়োজন হবে। যা রি সাইক্লিং করে অর্ধেক পানি ব্যবহার করা যাবে।

ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আলী জুলকার নাইন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সৈকত আকবর, রাশিয়ার রসাটেমের প্রকল্প পরিচালক পাভেল ভাসভসহ উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।

২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এরপর নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ।