এশিয়ার বাজারে তেলের দাম আরো কমেছে
বাংলাদেশে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল প্রায় সাত বছর আগে। এরপর বেশ কয়েক দফা তেলের দাম বাড়ানো হলেও কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমে। এ নিয়ে টানা সাত মাস বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নগামী রয়েছে।
আজ সোমবার ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার বাজারে তেলের দাম আরো প্রায় ৩ শতাংশ পড়েছে।
তেলে দাম কমার কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তেল শোধনাগার শ্রমিকদের ধর্মঘট ও চীনের মন্থর উৎপাদনকে দায়ী মনে করা হচ্ছে।
আজ নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত তেলের দাম পড়তির দিকে ছিল। দেখা গেছে, মার্চ মাসের জন্য এ তেলের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি তিন হাজার ৬৭৮ টাকা। আর এ ক্ষেত্রে লন্ডনের আইসিই ফিউচার এক্সচেঞ্জে এর দাম ছিল চার হাজার ৪২ টাকা, যা আগের চেয়ে ১০৯ টাকা কম।
বৃহৎ কয়েকটি তেল কোম্পানির সঙ্গে বেতন ও নিরাপত্তাসম্পর্কিত নতুন জাতীয় চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়নের (ইউএসইউ) ব্যানারে তেলশ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০টির বেশি তেল শোধনাগার, টার্মিনাল, পাইপলাইন ও রাসায়নিক প্লান্টস কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে ইউএসইউ। ১৯৮০ সালের পর এ ধরনের ধর্মঘটে আর অংশ নেয়নি দেশটির শোধনাগারের শ্রমিকরা। এসব শোধনাগারে প্রতিদিন ১৮ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল শোধিত হয়, যা দেশটির চাহিদার ১০ শতাংশের বেশি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের রয়্যাল ডাচ শেল, টেসোরো, ম্যারাথন পেট্রোলিয়ামের মতো কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে শোধনাগারগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছে। এতে প্রায় তিন হাজার ৮০০ শ্রমিকের ভাগ্য ঝুলে যেতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে ইউএসইউর পক্ষ থেকে।
ব্যয় কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের শোধনাগারের মালিকরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করছেন, তাতে তেলের দাম আরো কমবে।
চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ায় জানুয়ারি মাসে উৎপাদন চিত্র নেতিবাচক তথ্য দিয়েছে। এসইচএসবিসির উৎপাদন-ক্রয়-ব্যবস্থাপনা সূচকে জানুয়ারিতে চীনের পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪৯ দশমিক ৬ পয়েন্টে। তবে এর একদিন আগে সরকারি তথ্যে বলা হয়েছিল এ সূচক দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৯ পয়েন্টে, তবে তাও ২০১২ সালের ৫০ পয়েন্টের নিচে। এ বিষয়টিও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমাতে প্রভাব রেখেছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে লেনদেনের সময় অপরিশোধিত তেলের বিতরণমূল্য ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে, তা ২০০৯ সালের এপ্রিলের পর একদিনে সর্বোচ্চ উত্থান। তবে এ ঊর্ধ্বগতির জন্য ভূমিকা ছিল দেশটির তেলকূপের বিভিন্ন পণ্যের দামের নিমজ্জন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দৈনিক তেল উৎপাদন কমে যাবে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ। আর এতে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ ব্যারেল কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববাজারে কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে ১৯ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন। সিলেট নগরের খ্রিস্টান মিশনে যিশুখ্রিস্টের জন্মোৎসব প্রাক-বড়দিন উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ওই দিন অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সব সময় আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে তেলের দাম বাড়াতে পারি না। সরকার দীর্ঘদিন থেকে তেলে ভর্তুকি দিয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, তেলের দাম কমানো দেশের জন্য ভালো, এতে রাজস্ব বাড়বে।
তেলের দাম না কমালেও বাড়তি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাটা জরুরি বলে মনে করেন অনেকে।