পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে
দেশের পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিন বছরে বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে ৬১৮টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আরো ৩১৯টি কারখানা বন্ধের পথে রয়েছে। একই সময়ে নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ২৫০টি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে আজ শনিবার দুপুরে ‘পোশাকশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর রহমান এ কথা বলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘চলতি বছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। এটি সরকারের বেশ কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো কিছু নয়। গত পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের মধ্যে আছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে তা ১২ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিশ্বের সব পণ্যের দাম বাড়লেও পোশাকের দাম শুধু কমেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে তৈরি পোশাকের দাম ৪০ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরেও এর দরপতন অব্যাহত আছে। তবে প্রতিবছর তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে ৮-১০ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের মাধ্যমে পোশাক কারখানাগুলোকে যে রিমেডিশন প্লান দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাকে গড়ে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তা ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত। এতে পোশাকশিল্প মালিকদের জন্য একটি বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।’
এ খাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও পোশাক কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে না। এতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখতে অনেক মালিক পোশাক কারখানা স্থানান্তরের চিন্তা করছেন। অন্যদিকে নতুন কারখানা স্থাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জনসম্মুখে আসা উচিত, যাতে উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎভিত্তিক, না কি গ্যাসভিত্তিক কারখানা স্থাপন করবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা, একটি জ্বালানি নীতিমালা একান্ত প্রয়োজন।’
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগে পোশাক কারখানা থেকে ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক কর দেওয়া হতো। এখন তা ৩৫ শতাংশ দিতে হয়। এটি কোনোভাবেই শিল্পবান্ধব নয়। পাঁচ বছরের জন্য আবারো ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক কর ধার্য করা উচিত। শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প শুল্কমুক্ত রাখা। কারখানা নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত, কমপ্লায়েন্ট ও পরিবেশবান্ধব করতে আমদানি করা যন্ত্রপাতি শুল্কমুক্ত করারও অনুরোধ জানান তিনি।’
সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিবছর ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে একটি তহবিল করা হচ্ছে। এ তহবিল থেকে বিজিএমইর সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শ্রমিককে সহায়তা করা হবে। এ লক্ষ্যে সব প্রতিষ্ঠানকে ডাটাবেজে যুক্ত হতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সব কারখানাকে বিজিএমইএর ডেটাবেইসের অধীনে আসতে হবে। যারা এটি করবে না, তারা সহায়তা পাবে না। চার বছরে এ পর্যন্ত ৬০৩টি কারখানা এ ডেটাবেইসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতে প্রতিটি শ্রমিকের তথ্য বিজিএমইর কাছে সংরক্ষিত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মইনউদ্দিন আহমেদ, ফারুক হোসেইন, সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, নাসির উদ্দিন (অর্থ), মাহমুদ হাসান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।