১০ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট অবিক্রিত : রিহ্যাব

Looks like you've blocked notifications!

দেশের আবাসন খাতে গত পাঁচ বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এ খাতের মন্দা কাটছে না।

চলিত অর্থবছরেও (২০১৫-১৬) বিভিন্ন কোম্পানির ১০ হাজার অবিক্রিত তৈরি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে দাবি করেছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের পর থেকে অবিক্রিত তৈরি ফ্ল্যাটের পরিমাণ বেড়েছে। দাম কমানোর পরও ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহ বাড়েনি ক্রেতাদের। আবাসন ব্যবসায় মন্দা ও মূলধন হারোনোর কারণে ২০১৪ সালে রিহ্যাবের তালিকাভুক্ত ৯২টি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে।

ফ্ল্যাট তৈরি করে এমন ২০৯টি রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, অবিক্রিত তৈরি ফ্ল্যাটের সংখ্যা ২০১০ সালে ছিল তিন হাজার ১৮টি, ২০১১ সালে তিন হাজার ৬৫২টি, ২০১২ সালে তিন হাজার ৮৮৭টি ও ২০১৩ সালে ছিল পাঁচ হাজার ৫১৪টি।

২০১৪ সালে অবিক্রিত ফ্লাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার ১৮৫টি। এর বাজার দর ছিল আট হাজার ৮১১ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

রিহ্যাবের নেতাদের মতে, সংগঠনটির সদস্য নয়, এমন কোম্পানিতেও অবিক্রিত ফ্লাটের সংখ্যাও কম না। সব মিলিয়ে হিসাব করলে পাঁচ বছরে অবিক্রিত ফ্ল্যাটের সংখ্যা তিনগুণ হবে।

সংগঠনটির হিসাব মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২০৯টি প্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার ১৬৫টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে আগের বিক্রি করা ফ্ল্যাট হস্তান্তর হয়েছে নয় হাজার ৭৭৯টি ফ্ল্যাট। ২০১৪ সালে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৪৯টি। ২০১০ সালের চেয়ে ওই বছর বাড়ার কথা থাকলেও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।

২০১৪ সালে কোম্পানিগুলোর অবিক্রিত তৈরি ফ্লাটের ব্যয় দাঁড়ায় আট হাজার ৮১১ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।  অন্যদিকে একই সময়ে ফ্লাট বিক্রি বাবদ আয় ছিল এক হাজার ২৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ায় কমছে কোম্পানির আয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয়। এ ছাড়া অনেক কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। এর কারণে বাড়ছে সুদের বোঝা।

১৯৯২ সালে সাতটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাত্রা শুরু করে রিহ্যাব। বর্তমানে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ১১৫১টি।

রিহ্যাবের নেতাদের মতে, দেশে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার আবাসন কোম্পানি রয়েছে। রিহ্যাবের বাইরেও আরো দুই হাজারের অধিক উদীয়মান প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা পরিচালনা করছে। ব্যবসায় ভালো হলে তারাও রিহ্যাবের সদস্য হতো। মন্দার কারণে গত পাঁচ বছরে অতালিকাভুক্ত কয়েকশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি ও মুখপাত্র লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, শেয়ারবাজারের দরপতন, অপরিশোধিত টাকা ফ্লাটে বিনিয়োগ নিয়ে জটিলতা ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমছে।’

আবাসন খাতের নেতারা বলছেন, আবাসন প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, ব্যক্তি খাতেও ঘরবাড়ি নির্মাণের হার কমে গেছে। গৃহ নির্মাণ খাতের এই গতিহীনতার কারণে বিপাকে পড়েছে দেশের বহু শিল্পখাত। নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে আবাসনের সহযোগী শিল্পেও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।

আমান ডেভেলপারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সারির আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু কোম্পানি এরেই মধ্যে জনবল অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে। সব খরচই কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উদীয়মান এ খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণ শোধ করতে উৎপাদন খরচে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে। ক্রেতার কেনার আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সহসভাপতি মো. লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন আমরা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছি। কম দামে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির প্রস্তাব করেও ক্রেতা নেই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটেও ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখা হয়। এতে ২০১৪ সালের শেষ দিকে আবাসন ব্যবসায় কিছুটা গতি ফিরতে শুরু করে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের অর্থায়নের লক্ষ্যে সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করে আসছি। কিন্তু নানা সময় বিভিন্ন আশ্বাস পেলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। এ তহবিল গঠন হলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ বাড়ত।’

লিয়াকত আলী আরো বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে। ফ্ল্যাট কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। ব্যক্তির জমানো টাকা থেকে এত টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেক গ্রাহককে ব্যাংক ঋণে ওপর নির্ভর হতে হয়। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর ব্যাংক সুদের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু তারপরও তা বেশি। এতে ক্রেতাদের আগ্রহ তেমন বাড়ছে না।’