সিডব্লিউএসআইর গবেষণা

লবণাক্ততায় অর্ধেক কমবে নিম্নভূমির ফসল

Looks like you've blocked notifications!

সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে ৫০ ভাগ ফসল উৎপাদন কমে যাবে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। 

৪০ বছর ধরে পরিবেশ ও জলবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছে ক্রানফিল্ড ওয়াটার সায়েন্স ইনস্টিটিউট (সিডব্লিউএসআই)। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কী পরিমাণ জমি লবণাক্ত হচ্ছে ও ফসল উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়বে, তার একটি গবেষণা মডেল দাঁড় করিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রে পানির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে স্থলভাগ গ্রাস করছে। আর এতে উপকূলবর্তী জমির লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। বর্ষাকালে প্লাবিত হওয়ায় এসব জমিতে লবণ আসে। বৃষ্টির পানির সাথে লবণ সরে যাচ্ছে না। এতে শুষ্ক মৌসুমে ব্যাপকভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমির লবণ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। 

সিডব্লিউএসআইর গবেষক ইয়ান হোলম্যান জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন; তবে তিনি এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে উপকূলবর্তী এলাকায় ফসল উৎপাদন বাড়ানো অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।’ 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ ভূমি নিচু হওয়ায় সমুদ্রে পানির পরিমাণ বাড়লে এসব জমি লবণে নিমজ্জিত হওয়ার প্রবণতা আছে। জলবায়ু অনুকূল ও উর্বরতার কারণে ভালো ফসল পাওয়া যায় সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকার জমিতে, যা বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির ৩০ শতাংশ। এসব জমি অনাবাদি হয়ে গেলে সাড়ে তিন কোটি মানুষের বেঁচে থাকাই কষ্টকর হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় সংকট সৃষ্টি হবে। 

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে পানি বাষ্পীকরণের মাধ্যমে জমিতে লবণস্তর জমে। লবণাক্ত হওয়ায় বর্ষার আগ পর্যন্ত এসব জমিতে আবাদ করা যায় না। বর্তমানে দেশে শুষ্ক মৌসুমে খরাভাব দু-তিন সপ্তাহের বেশি সময় থাকে। এ সময় যেকোনো জমি আবাদি করে তুলতে প্রচুর সেচের প্রয়োজন হয়। আর জমিতে লবণাক্ততা থাকলে তা আবাদের অনুকূলে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের গবেষকরা যৌথভাবে কাজ করছেন। ‘বাস্তুসেবা ও দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে মডেল তৈরি করেছেন তাঁরা। 

বর্ষার সময়ও লবণ সরে না যাওয়ায় প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় আট পিপিটি (প্রতি হাজারে ইউনিট) লবণের উপস্থিতি থাকে। এতে ৫০ শতাংশ হারে ফসল কমবে। এভাবে ফসল উৎপাদনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে কৃষকের জীবনে দুর্যোগ দেখা দেবে।