তরুণ উদ্যোক্তা

এক ক্লিকেই কক্সবাজারের পণ্য মানুষের দ্বারে

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখতে প্রতিবছর লাখো মানুষ কক্সবাজার যান। ফিরে আসার সময় তারা বয়ে নেন সেখানকার বিশেষ সব পণ্য। আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য কক্সবাজারের স্মারক হয় এসব পণ্য। কিন্তু বিশেষ এসব পণ্য শুধু কক্সবাজারে এসেই কেন কিনতে হবে?

সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, বার্মিজ আচার, ঝিনুক-শামুকের শোপিস ও আদিবাসীদের হস্তশিল্পের মতো কক্সবাজারের পণ্যগুলো দেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করলেও দেশের অন্যান্য স্থানে এগুলো সেভাবে পাওয়া যায় না। কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা যাওয়ার সময় কিছু পণ্য নিয়ে গেলেও বরাবরই এর চাহিদা থাকে। এই চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই কক্সবাজার ই-শপের যাত্রা শুরু। এক ক্লিকেই শুঁটকি, আচারসহ কক্সবাজারের সব পণ্য সারা দেশের মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয় তরুণ উদ্যোক্তা লিটন দেবনাথের কক্সবাজার ই-শপ।

কক্সবাজার ই-শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটন দেবনাথ বলেন, তাঁর চিন্তা ছিল নিজের গণ্ডি পেরিয়ে কিছু করা। এই চিন্তা থেকেই ই-কমার্স ব্যবসায় যুক্ত হন। দিন দিন ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য হচ্ছে। ভবিষ্যতে ই-কমার্স আরো বিস্তৃত হবে । এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে ই-কমার্স ব্যবসা অনেক দূর এগিয়েছে।  

২০০৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর পারিবারিক সংকটে লিটন দেবনাথের লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। ডাক্তারের সহকারী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। ওই সময় সাইবার ক্যাফেতে ইউটিউব ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কম্পিউটারের কাজ শেখেন। ২০০৭ সালে একটি কম্পোজের দোকান দিয়ে শুরু হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ। ব্যবসার পাশাপাশি চলে ফ্রিল্যান্সিং। ২০১০ সালে তিনি দাঁড় করান কক্সবাজারের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েব আর্ট আইটি’। কয়েকজন ডেভেলপার নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখানেই থেমে থাকতে চাননি লিটন। কক্সবাজারে আসা পর্যটক ও তাঁদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কক্সবাজার ই-শপ। এক বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। মাত্র আটজন কর্মী নিয়েই এগিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজের প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ই-শপ সম্পর্কে লিটন দেবনাথ বলেন, লইট্যা, ছুরি, কোরাল, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি, আচার, চকলেট, আদিবাসীদের হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, শামুক-ঝিনুকের তৈরি শোপিস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করা করে। এসব পণ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ক্যাশ অন ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে কক্সবাজার ই-শপ।

ই-কমার্স ব্যবসায় নামতে গিয়ে প্রথমেই তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সমস্যায় পড়েন লিটন দেবনাথ। পরে অবশ্য ই-ক্যাবের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এই সমস্যা দূর হয়। ই-কমার্স নিয়ে অনেকের লেখা পান। এ ছাড়া কয়েকজন ই-কমার্স উদ্যোক্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। প্রতিদিনই তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।

কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ করেন লিটন দেবনাথ। তাঁর মতে, বাংলাদেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ই-কমার্সের গুরুত্ব বোঝে না। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তা ভালো সার্ভিস দিয়েও তেমনভাবে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এ ছাড়া প্রথম দিকে অনলাইন পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা ছিল। কুরিয়ার আর অনলাইনে পেমেন্টের সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। 

বেশ কয়েকটি মেলায় অংশগ্রহণ করে নজর কেড়েছেন কক্সবাজার ই-শপ। এ ছাড়া গত ১০ এপ্রিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০১৪ পেয়েছেন লিটন দেবনাথ।

ই-কমার্স নিয়ে আরো এগোতে চান লিটন দেবনাথ। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) ও কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য হয়েছেন। এ ছাড়া নতুন করে আবার পড়ালেখা শুরু করেছেন তিনি। একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নিচ্ছেন লিটন দেবনাথ

কক্সবাজার ই-শপ নিয়ে লিটন দেবনাথের পরবর্তী লক্ষ্য হলো বিদেশে পণ্য পাঠানো। এই লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের ১৩টি দেশে কক্সবাজারের শুঁটকি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

লিটন দেবনাথের মতে, ই-কমার্স নিয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা পুঁজি ও কাজ করার ক্ষেত্র। উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় সরকার ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে দেশই লাভবান হবে। ভারতে ই-কমার্স নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই খাতের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

লিটন দেবনাথের কক্সবাজার ই-শপে কোনো অর্ডার দিতে চাইলে http://coxsbazareshop.com/ ঠিকানায় যান।