মাংসের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে কাঁঠাল!
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অ্যানি রিয়ু দক্ষিণ ভারতে এসেছিলেন পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে। সময়টা ২০১১ সাল। অ্যানি দেখেন, গ্রামের লোকজন ‘সজারু’র মতো দেখতে একটা ফল বা সবজি ভেঙে খাচ্ছে। আবার তরকারি রান্না করেও খাচ্ছে।
অ্যানি ওই সবজির তরকারি মুখে দিলেন। তরকারিটি কাঁচা কাঁঠালের। এরপর কী হলো জানেন? অ্যানি এখন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। যে প্রতিষ্ঠানের নাম ‘দ্য জ্যাকফ্রুট কোম্পানি’। ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের চাষিদের কাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করা আর কাঁঠালকে প্রক্রিয়াজাত করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশে বিক্রি করা।
অ্যানির প্রতিষ্ঠান যে কেবল ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছে তা নয়, বেশ লাভে আছে ওই প্রতিষ্ঠান। ‘বারবিকিউ জ্যাকফ্রুট’, ‘টেক্স-মেক্স জ্যাকফ্রুট’, ‘তেরিইয়াকি জ্যাকফ্রুট’, ‘কারি জ্যাকফ্রুট’ চার ধরনের প্যাকেটে করে কাঁঠাল চলে যাচ্ছে বড় বড় সুপারশপে। নিরামিষভোজীদের প্রিয় খাবার হচ্ছে এখন কাঁঠাল।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঁঠাল নজর কেড়েছে পশ্চিমা বিশ্বের। বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের কাছে। এমনকি কাঁঠালই হয়ে উঠছে মাংসের অন্যতম বিকল্প।
নিউট্রিশন বিজনেস জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ২৫ শতাংশ ভোক্তা মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আর মাংসের বিকল্প হিসেবে যেসব খাবার আছে এসব খাবারের বিক্রি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন ভারতের শেফ হরি নায়েক। ওই রেস্তোরাঁয় কাঁঠালের বিভিন্ন পদ রান্না করেন তিনি। হরি নায়েক জানান, এ দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) মানুষ ভালো ভাবেই খাওয়া শুরু করেছে কাঁঠাল।
রান্না বিষয়ে লেখালেখি করেন ভারতের জুলি সাহনি। তিনি জানালেন, নিরামিষভোজীরা মাংসের মতো একটা খাবার খায় না। বিষয়টি ‘মিস’ করার মতো। কাঁঠালের তরকারি তা ভুলিয়ে দিবে। খেতে প্রায় মাংসের মতোই, যেন হাড়গুলো ছাড়িয়ে রাখা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এত গেল কাঁচা কাঁঠালের কথা। পাকা কাঁঠালের গুণও কম নয়। দুর্দান্ত একটি মিষ্টি ফল। আর ডেজার্ট হিসেবেও দারুণ।
ডায়েট নিয়ে কাজ করা জেস কলকো বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা কেবল চার ভাগের একভাগ আঁশ খাবার থেকে পাই। কাঁঠালে আছে উদ্ভিজ আঁশ, যা এর ভেতরেই আছে, বাইরে থেকে যোগ করার প্রয়োজন নেই। এতে আছে পটাশিয়াম, যা পেশি গড়ে তোলে আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা আগ্রহী হয়ে ওঠছে দক্ষিণ এশিয়ার কাঁঠালের প্রতি। কিন্তু অ্যানি রিয়ুর মতো উদ্যোক্তাদের ভাবনা আরো গভীরে। অ্যানি মাংসের ওপর চাপ কমাতে চান। অ্যানির মতে, কাঁঠালই বিকল্প হয়ে উঠতে পারে মাংসের।
অ্যানি জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ মাংসের উৎপাদন ও বিপণন। ভাবনাটা ওখানেই । আর এখানেই কাঁঠাল হতে পারে দারুণ একটা বিকল্প।