কলাগাছের আঁশ থেকে কাপড়ের সুতা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এবার মানিকগঞ্জের কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ ধরনের সুতা দিয়ে হ্যান্ডিক্রাফট, কাগজ, ন্যাপকিন, শিশুদের প্যাম্পার্স ও কাপড় বানানো যায়। এ ধরনের উদ্যোগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা ও গবেষকরা।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে কলা গাছের আঁশ থেকে সুতা উৎপাদনের এ উদ্যোগ নিয়েছেন রনি রায়হান ও মেহেদি হাসান সোহাগ। তাঁরা দেশের বেসরকারি দুটি টেলিভিশন চ্যানেলে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন।
রনি ও মেহেদি প্রায় বছর খানেক চেষ্টার পর সফলতা পেয়েছেন। এ সুতা উৎপাদনের জন্য তাঁরা বানিয়েছেন মেশিন। এ মেশিনে কলাগাছের খোলস থেকে আঁশ বের করছেন।
কলাগাছের আঁশ থেকে সূতা উৎপাদনকারী রনি রায়হান বলেন, ‘প্রথমে হাতে ফাইবার (আঁশ) বের করে পরীক্ষা করেছি। তার পর মেশিন বানালাম। এখন পর্যন্ত স্যাম্পল (নমুনা) তৈরি করতে পারছি। এই সুতা অনেক হাইজেনিক (স্বাস্থ্যকর) এবং দাম কম।’
মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, ‘কারো যদি সাপোর্ট পাই অথবা কেউ যদি কোনোভাবে পৃষ্ঠেপোষকতা করেন, তাহলে আশা করি আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
কলাগাছের খোলস নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক দেওয়ান মোর্শেদ আহমেদ। তিনি জানান, খরচ বেশি পড়ায় দেশে অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। কলাগাছের খোলস থেকে সুতা তৈরি করার পর অনেক শিল্পপতিই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কীভাবে এটাকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে।
দেওয়ান মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ‘বুটিকসে আমরা রিসার্চ প্রজেক্টের আন্ডারে ফাইবার প্রসেসিং লাইনে কলাগাছ থেকে সুতা প্রস্তুত করার জন্য কিছু কারেকশন করেছি। সেটিংসে কিছু চেঞ্জ করা লাগবে। সেটার জন্য ক্যালকুলেশন করা হয়েছে। ছয়জন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এখানে এসেছেন। তাঁরা ব্যানানা ফাইবার (কলাগাছের সুতা) নিয়ে প্রজেক্ট করতে চান। তাঁদের টোটাল প্রজেক্টটা ডিজাইন করে দিতে হবে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশেও কলারগাছের সুতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ন ম্যানুফেকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান ড. হোসনে আরা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ধরনের কাপড় ব্যবহার করি তা এই কলাগাছের আঁশের সুতা দিয়ে বানানো সম্ভব। তা ছাড়া আমাদের ব্যাগ, সাজিয়ে রাখার জিনিস, গৃহসামগ্রি বানানো সম্ভব। আর এই সুতা অনেক বেশি পানি চুসে নিতে সক্ষম, তাই এটা দিয়ে ব্যান্ডেজ থেকে শুরু করে স্যানিটারি ন্যাপকিন পর্যন্ত বানানো সম্ভব।’