লবণের দাম বাড়ায় চামড়ার মান নিয়ে শঙ্কা
লবণের দাম বাড়ায় চলতি বছর কোরবানির চামড়ার মান কমার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, টাকা বাঁচাতে কাঁচা চামড়ায় লবণ কম দিলে তার মান কমবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণের বাজার এখন বেশ অস্থির। গত বছর ঈদুল আজহার সময় ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। একই পরিমাণ লবণের বস্তার দাম বর্তমানে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে লবণের দাম বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।
লবণের দাম বাড়া প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এখনো আমাদের স্টকে কিছু লবণ আছে। আমদানি করা লবণটা এখনো আসেনি। কোনো ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়নি। মূল্য বাড়ানোর কোনো সিচুয়েশন হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘লবণের দাম বেশি বলে যদি চামড়ায় তা কম দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু প্রচুর চামড়ার ক্ষতি হবে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হব আমরা।’
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার দরপতন হচ্ছে। এ সুযোগে চলতি বছর বেশ কম দামে চামড়া সংগ্রহ করতে চান ব্যবসায়ীরা।
বছরে দেশে মোট যে পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হয়, তার অর্ধেকই পাওয়া যায় ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির মাধ্যমে। তাই ঈদকে সামনে রেখে চামড়া সংগ্রহের বিশেষ প্রস্তুতি থাকে ব্যবসায়ীদের। তবে চলতি বছর একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর দূষণরোধে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পগুলো স্থানান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেসব ট্যানারি এখানো সাভারে তাদের কারখানা স্থানান্তর করতে পারেনি, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। আর মূলধনী লোকসান, ব্যাংকঋণ, কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের পাওনা ও জরিমানা থেকে রেহাই পেতে অনেক ট্যানারি এরই মধ্যে তাদের কারখানা বন্ধ রেখেছে। তবে অনেকে আবার জরিমানা দিয়েই ট্যানারি চালু রাখছেন। কিন্তু ঈদ ঘিরে কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করবেন—সে বিষয়ে আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
আনোয়ার ট্যানারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি করেছি। এ ছাড়া কাঁচা চামড়ার ব্যাপারীরা টাকা পাবেন। ব্যাংকঋণ আছে। আমি এখন জরিমানা দিয়ে এখানে (হাজারীবাগ) আছি। দুই মাস হোক, তিন মাস হোক এভাবে থাকতে হবে। কষ্ট করে হলেও ওখানে (সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে) যাওয়ার আগ পর্যন্ত তো এখানে চালাতে হবে। তা না হলে এখানে যে চামড়া আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে।’
রাজধানীর কাঁচা চামড়ার আড়তগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। বাড়তি পরিমাণ চামড়া সংগ্রহে কাঁচা চামড়ার আড়তগুলো ফাঁকা করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ব্যাংকঋণের অনিশ্চয়তা ও ট্যানারি স্থানান্তর জটিলতা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন তাঁরা।
হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বছরে একবার হান্ড্রেড পার্সেন্ট (পুরোপুরি) পেমেন্ট আমরা ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে পেয়ে থাকি। সেই অনুপাতেই কিন্তু আমরা চামড়া কীভাবে কালেকশন করব, কীভাবে লবণজাত করব—এ বিষয়গুলো আমরা ফাইনাল করি। এখনো পর্যন্ত আমরা ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে সেই ধরনের কোনো আশা বা ভরসা বা সেই ধরনের কোনো কমিটমেন্ট আমরা পাচ্ছি না।’