সাক্ষাৎকার
কথা নয়, কাজ দেখাব : মাতলুব আহমাদ
আবদুল মাতলুব আহমাদ। নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান। জন্ম ঢাকায়, ১৯৫২ সালে। অর্থনীতিতে অক্সফোর্ড থেকে মাস্টার্স করেছেন। ১৯৮২ সালে ছোট একটি গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন চিনি, সিমেন্ট, কাগজশিল্পসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক ছিলেন তিনি। ২৩ মে অনুষ্ঠিতব্য এফবিসিসিআইয়ের দ্বিবার্ষিক (২০১৫-১৭) নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরই মধ্যে তিনি ‘উন্নয়ন পরিষদ’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনে জয়ের আশা রয়েছে তাঁর। দেশের অর্থনীতি, ব্যবসায়ী ও সংগঠনের স্বার্থরক্ষায় তাঁর পরিকল্পনা বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
প্রশ্ন : এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে আগে অনেকেই ছিলেন। আপনার পরিকল্পনায় নতুনত্ব কী? জয়ী হলে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবন?
মাতলুব আহমাদ : বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে। আমরা জয়ী হলে এ লক্ষ্য সফল করতে আরো বেশি নজর দেব। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নয়ন দরকার। পাশের দেশ ভারত প্রযুক্তির উন্নয়নে অনেক কাজ করছে, ফলে তারা উন্নতিও করছে তুলনামূলকভাবে বেশি।
আর কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের এগ্রো বেইজ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত। এ ক্ষেত্রে আমরা কাজ করব।
প্রশ্ন : আপনি আপনার প্যানেলে কাদের প্রাধান্য দিয়েছেন?
মাতলুব আহমাদ : নতুনরাই আমার প্যানেলে প্রাধান্য পেয়েছে। নতুনরা নতুন দিকনির্দেশনা দেবে। আশা করছি, তারা নতুন সাফল্য আনবে।
প্রশ্ন : বিনিয়োগ ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
মাতলুব আহমাদ : বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। যারা যে যে সেক্টরে ভালো করছে, সুনাম আছে, তাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত নতুনদের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া। আমি এ ক্ষেত্রে কাজ করি, করব।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে চান?
মাতলুব আহমাদ : রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের বোঝা টানতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে কাজ করতে চাই। তিন মাসের মধ্যেই সুদের হার অনুকূলে আনতে কাজ করব। প্রতিষ্ঠানভেদে ঋণের সুদের হারের বৈষম্য রয়েছে। কারো জন্য ১২, কারো জন্য ১৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। আমি মনে করি, সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার নামিয়ে আনা সম্ভব। সবার জন্য ৯ শতাংশ হারে সুদ নির্ধারণ করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আর এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী মহল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সবাই সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
বহুস্তরের মূসক প্রথা থেকে সরে আসা উচিত। বিশ্বের সব দেশে এক স্তরবিশিষ্ট মূসক প্রথা চালু রয়েছে। দায়িত্ব পেলে আমাদের দেশেও এক স্তরবিশিষ্ট মূসক প্রথা প্রবর্তনে সরকারের ইচ্ছার প্রতি সমর্থন দেব। ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সার্বিক সংস্কারের মাধ্যমে এফবিসিসিআইকেও আন্তর্জাতিক মানের রূপ দেওয়া হবে। শুধু কথা নয়, কাজ করে দেখাতে চাই। দায়িত্ব পালনে আমি ব্যবসা থেকে বিরত থাকব।
প্রশ্ন : তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করতে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মাতলুব আহমাদ : হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে কাজ করতে চাই। সরকারের সহায়তায় উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ এবং সহায়তায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। জনশক্তিকে কাজে লাগাতে তাদের দক্ষ করে করে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তি দেশের সম্পদ।
প্রশ্ন : সবুজ শিল্পায়ন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব কতটুকু?
মাতলুব আহমাদ : হ্যাঁ, ব্যবসায়ীদের দায় আছে তো বটেই। আগের চেয়ে এখন অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সবুজ শিল্পায়নে বর্তমানে অনেকেই এগিয়ে আসছে।
প্রশ্ন : শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আপনারা উদ্যোগ নেবেন কি?
মাতলুব আহমাদ : ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সবার নিরাপত্তায় আমরা কাজ করব।
প্রশ্ন : প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন রয়েছে। দেশের অর্থনীতির বিকাশে ওই সব সংগঠনের ভূমিকা উন্নয়নে এফবিসিসিআই কাজ করবে কি?
মাতলুব আহমাদ : আঞ্চলিক ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে কাজ করব। এসব সংগঠনকে ব্যবহার করা গেলে দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ আরো সুন্দর হবে। পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা পেলে অনেকেই নতুন ব্যবসায় উদ্যোগী হবে।