চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ ভাগ : বিশ্বব্যাংক
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।
এবারের বাজেটে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আজ সোমবার বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আবাসিক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বক্তব্য দেন।
এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়ন সূচকের অগ্রগতির কারণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়ে ভালো।
জাহিদ হোসেন বলেন, জীবনযাত্রার মানদণ্ডের বিচারে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং অতিদারিদ্র্যসীমা নির্ধারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনায় বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে ভালো করেছে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) হিসাব অনুযায়ী, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। অথবা ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখে এসডিজি অর্জন সম্ভব যদি প্রবৃদ্ধিকে অধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়।
প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং এই জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য বিপণন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিকে অধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যেতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে আসবে।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে এলে তাকে শূন্য দারিদ্র্য বলে হিসাব করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় এখন এক দশমিক ৯০ মার্কিন ডলারের কম।
বিশ্বব্যাংক গত অর্থবছরে অর্জিত ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরে অতিদারিদ্র্যের হার হিসাব করেছে।
জাহিত হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোনো দেশের দারিদ্র্যের হার বলতে মূলত অতিদারিদ্র্যকে বোঝানো হয়। প্রত্যেক অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে বিচার করে বিশ্বব্যাংক এই হার ঠিক করে।
সেই হিসেবে ২০১০-১১ সময়ে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, বাংলাদেশ আর্থিক প্রবেশাধিকার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য পেয়েছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো খাত শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন চিমিয়াও ফান।
যাদের আয় দৈনিক এক দশমিক ৯০ ডলারের কম, বিশ্বব্যাংক তাদের অতিদরিদ্র বলে চিহ্নিত করেছে।