গ্রামীণফোনের কলড্রপ, গ্রাহকরা অতিষ্ঠ

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফয়সাল। কাজের সময় মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় কেটে যাচ্ছে লাইন। আবারও ফোন করছেন, আবারও কেটে যায় লাইন। কারিগরি ভাষায় একে বলা হয় ‘কলড্রপ’। কেবল ফয়সাল নন, রাজধানীর একাধিক এলাকায় মানুষ যখন তখন কলড্রপের শিকার হচ্ছেন। 

গত ১৫ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এনটিভি অনলাইনে একাধিক ফোন এসেছে। গ্রাহকরা জানতে চান, কবে শেষ হবে কলড্রপের এই যন্ত্রণা। গ্রাহকদের অধিকাংশই গ্রামীণফোনের সংযোগ ব্যবহার করেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্রামীণফোনে কলড্রপের হার অবিশ্বাস্য রকম হারে বেড়েছে।

একাধিক গ্রাহক জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গ্রামীণফোনের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে (১২১-এ ফোন করে) একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। ওই যোগাযোগ করতে গিয়েও গ্রাহকরা কলড্রপের শিকার হচ্ছেন। 

মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা হোসেন নিপা জানান, অফিসের কাজে, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কলড্রপের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। ওই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গ্রাহকসেবায় ফোন করলেও তাও কেটে যাচ্ছে। পয়সা খরচ করে এমন সেবা পেলে তা খুবই দুঃখজনক। এমনকি এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো দুঃখ প্রকাশও করা হচ্ছে না।  

কারওয়ান বাজারে অবস্থিত এক ব্যাংকের কর্মকর্তা নওশাদ করিম জানান, কারওয়ান বাজার থেকে সচিবালয়ে ফোন করলেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। দুই থেকে তিন মিনিটের কথায় পাঁচ থেকে ছয়বার কলড্রপ হচ্ছে। কথাও পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে না। ওই কর্মকর্তাও গ্রামীণফোনের সংযোগ ব্যবহার করেন বলে জানান।   

গ্রামীণফোন দেশের বৃহত্তম বেসরকারি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান। এর গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি। 

বিষয়টি জানার জন্য এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে ফোন করা হয়। সেবা প্রদানকারী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চার মিনিটের মাথায় এই সংযোগটিও কলড্রপের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় কারিগরি উন্নয়নের (প্ল্যান ওয়ার্ক) কাজ চলছে। এ কারণেই এই বিভ্রাট। 

তবে এই বিভ্রাট কতদিন থাকবে বা এ বিষয়ে কেন ব্যবহারকারীদের আগে থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি সে সম্পর্কে কিছু জানার আগেই কলড্রপ বিড়ম্বনায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

এনটিভি অনলাইনের কার্যালয়েও গ্রামীণফোনের সংযোগগুলো কলড্রপের বিড়ম্বনায় পড়ছে। ওই কার্যালয়ের পাঁচটি সংযোগ বারবার কলড্রপের শিকার হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর সঙ্গে কথোপকোথনের সময়ও দুই দফা কলড্রপ হয়।

সমস্যাটির কারণে জানতে চাইলে সৈয়দ তালাত কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যখন যেখানে সমস্যা হচ্ছে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি। গ্রামীণফোনের ট্রাফিক ক্রমাগত বাড়ছে। তবু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখন গ্রামীণফোনের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি গ্রাহক। সেখানে ওয়ান পারসেন্টের কম কল ড্রপ হয়। সেটুকুও যেন না হয় সে চেষ্টাও আমরা করছি।’

সৈয়দ তালাত কামাল আরো বলেন, ‘এনটিভি কার্যালয়টি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এই এলাকায় ট্রাফিক বা গ্রাহকের চাপ থাকে বেশি।’ এই ঘটনার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। কারিগরি দিকটি ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। 

কারিগরি কাজ হচ্ছে সে এলাকার গ্রাহকদের বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল কি না- জানতে চাইলে তালাত কামাল বলেন, ‘অবশ্যই দুঃখ প্রকাশ করা উচিত বা জানানো উচিত। তবে কোনো কারণে হয়তো বিষয়টা ম্যানেজ করা হয়নি।’ 

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কলড্রপ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জানান, কলড্রপসহ অন্যান্য ভোগান্তির ব্যাপারে গ্রাহকদের অভিযোগ আছে। আর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ বেশি।

ওই বছরই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গ্রামীণফোনের কলড্রপের ব্যাপারে ফেসবুকে বিরক্তি প্রকাশ করেন।