কেমন বাজেট চাই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

আমি উচ্চাভিলাষী বাজেট পছন্দ করি : অর্থমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি
 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আমি উচ্চাভিলাষী শব্দটি পছন্দ করি। এটা শুনতে আমি অভ্যস্ত। আমি প্রতিবছরই উচ্চাভিলাষী বাজেট দেই।’ এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ বছর বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছর ধরে ‘আটকে থাকা’ ছয় শতাংশের ঘর ছাড়াবে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় রাজস্ব বাড়ানো ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনই আসছে বাজেটে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিক পুনর্গঠন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। urgentPhoto
অষ্টমবারের মতো এই অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি-এফবিসিসিআই। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে আসন্ন বাজেটের ওপর বিশেষজ্ঞরা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটি ঢাকার পাশাপাশি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং নিউইয়র্ক স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে এনটিভি। সেখান থেকেও বিশেষজ্ঞরা সরাসরি আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই এ বছর বাজেট করার ক্ষেত্রে রিজার্ভ, জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাস, ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহতের মতো বিষয়গুলোর কারণে সরকার বেশ কিছু সুবিধা পাবে উল্লেখ করে বক্তব্য দেন প্যানেল আলোচক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তিনি বাজেট ‘উচ্চবিলাসী’ বলেও ইঙ্গিত দেন।

দেবপ্রিয়র বক্তব্যের জের ধরেই অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘ড. দেবপ্রিয় বাজেটকে উচ্চাভিলাষীবলে অভিহিত করেন। এ শব্দটি আমি পছন্দ করি। এটা শুনতেও আমি অভ্যস্ত। ২৭ বছর আগে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তখন ছিল ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আমি ছয় বছরে বাড়িয়েছি ৩ শতাংশ। ৯২ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন বাজেট হচ্ছে তিন লাখ কোটি টাকা। আমার টার্গেট সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া। আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি এ বছর হবে।’

‘আমরা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে বের হতে পারছি না। আশা করছি, আগামী বছর পারব। আমাদের জেলাগুলো ৫৭ দেশের মধ্যে বড়। এ ক্ষেত্রেই আমাদের ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা সরকারকে নিচের স্তরে নিয়ে যাব। তবে এখনো আমরা পারিনি।’ যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।

রোববার ব্যাংকঋণের সুদ নিয়ে ঘোষণা

অনুষ্ঠানে অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোর দাবি জানান। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী রোববার এ ব্যাপারে ঘোষণা আসতে পারে।  

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রেইট অব ইন্টারেস্টটা অনেক হাই হয়ে গেছে, সেটা কমানো দরকার। সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটা রোববারেই জানতে পারবেন। সরকার যে টাকা আহরণ করে বাজার থেকে সেগুলো সুদের হার কমানো-বাড়ানোতে একটা ভূমিকা রাখে। সুদের হারের সমস্যাকে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার ও আহরণকে বাড়িয়ে সমাধান করা যায়।’ 

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যেখানে দেড় হাজার বিলিয়ন ডলার বিদেশ থেকে আহরণ করা হতো, সেটা এখন সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনায় আছে এটাকে ২০ হাজার বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। সংস্কার একটি চলমান প্রসেস। ছয়টি বাজেটের প্রত্যেকটিতেই সংস্কার হয়েছে। সেটি আগামীতেও চলমান থাকবে। 

জাতীয় আয়ের বড় অংশ বাজেটে যাওয়া উচিত। বাজেটে ক্যাটালিস্টিক কোনো কাজ দিলে সেটার বৃদ্ধি ভালো হয়। আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে এবং এই সেক্টরে যে অদক্ষতা রয়েছে তা সামাল দিতে হবে।’ বলছিলেন অর্থমন্ত্রী।

দেশে আর কোনো নতুন রাস্তার প্রয়োজন নেই

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরো বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ দেশে আর কোনো রাস্তার প্রয়োজন নাই, এখন প্রয়োজন এগুলোকে একটু মানুষ করা। আগামী বাজেটে সেদিকে নজর দেওয়া হবে। আমি সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করব, আপনারাও আর রাস্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করবেন না।’ 

‘আমরা বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়েছি, কিন্তু সঞ্চালনব্যবস্থা সে রকম করে উন্নত হয় নাই, এদিকে এই বছর নজর দেওয়া হবে। গ্যাস নিয়ে এলএনটি স্টেশন স্থাপন করা এবং কনভার্ট করার কাজটি সে রকম হয় নাই। এটা নিয়ে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু টোল রাস্তার প্রয়োজন রয়েছে, তা না হলে আমাদের পরিবহন খাতটিকে উন্নয়ন করা কঠিন হবে। যতই রাজস্ব আদায় করি না কেন সবই তো পরিবহন খাতে দেওয়া যায় না।’

আইসিটি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ট্যাক্স হলিডের প্রয়োজন নেই

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) খাতে দীর্ঘমেয়াদি ট্যাক্স হলিডের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যা আছে সেই ব্যবস্থায় হয়তো একটু উন্নয়ন করা যায়। বায়োটেকনোলজিতে আমরা যথেষ্ট অ্যাডভান্স হয়েছি। আগের চেয়ে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, যদিও জমির পরিমাণ কমেছে প্রতিবছর।’

সুদের হার কমানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সুপারিশের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুদের হার তো সরকার নির্ধারণ করে না। এটা আপনারাই করেন। আপনারা, ব্যবসায়ীরা একদিকে লোন নেন, আবার যখন লোন দেন তখন আপনারা সুদের হার বেশি করে নির্ধারণ করেন।’

পেট্রোলিয়াম ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম এবং এনার্জি সোর্স নিয়ে আমাদের ব্যবস্থা অত্যন্ত বাজে ব্যবস্থা। এতে একবার ভর্তুকি দিচ্ছি, আবার অন্য খাত থেকে আদায় করছি, এটা জঞ্জাল সৃষ্টি করছে পুরো সিস্টেমে।’

সেই অর্থনীতি আর নেই

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে এ বছরেই। ছয় বছর আগে ৯২ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে এবার তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হচ্ছে।’

ভবিষ্যতে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। আলোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেছেন, সেই অর্থনীতি আর নেই। এখনকার অর্থনীতি একবারেই আলাদা। এখনকার বাজেট বিরাট বাজেট। আমাদের অর্থনীতি বিরাট অর্থনীতি।’

ইমপ্রাকটিক্যাল দুটি দাবি

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অত্যন্ত ইমপ্রাকটিক্যাল দুটি দাবি, দাম কমান এবং ট্যাক্স কমান। এনটিভি আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের দ্রব্যমূল্য আর ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স কমানোর দাবির জবাবে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। 

অর্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘আমাকে হুকুম করা হচ্ছে উন্নয়নের ব্যাপারে। কিন্তু আপনারা আমাকে যদি কিছু না দেন তাহলে হুকুম তালিম হবে কীভাবে? সরকার রাজস্ব খাতে প্রচুর ব্যয় করতে পেরেছে। অর্থনীতিতে আমরা অনেকদিন ধরে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে বসে আছি। এটা প্রায় ১৫ বছর ধরে। এটা থেকে বেরুনোর সময় এসেছে।’

অভিবাসনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় যে দুর্নীতি ছিল তা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে গত কয়েক বছরে। আমাদের দেশে প্রচুর বিদেশের লোক আছে, যাঁরা আমাদের ব্যবসায় মিড লেভেল এবং সিনিয়র লেভেলে সার্ভিস দেন। এই সংখ্যা কমানোরও তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী।