সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে বিনিয়োগ আসবে

Looks like you've blocked notifications!
 

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকরা বিনিয়োগের পরিবেশের ওপর জোর দিয়েছেন। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জমি পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্বের বিষয়টি।

urgentPhoto

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটের সোনারগাঁওয়ে ‘কেমন বাজেট চাই’অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকরা এসব মতামত ব্যক্ত করেন। অষ্টমবারের মতো এই অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি-এফবিসিসিআই। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানটি ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম এবং নিউইয়র্ক স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করে এনটিভি। সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্যানেল আলোচকদের মধ্যে আরো ছিলেন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টচার্য, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মঞ্জুর এ এলাহী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা  আজিজুল ইসলাম এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম, সারের দাম কম থাকায় সরকার ভর্তুকি সামঞ্জস্য করা সুযোগ পাচ্ছে। অন্যান্য বছরে যেমন ভর্তুকি দিতে চাপ থাকে সেটা নেই। তিনি আরো বলেন, আপনি যদি অর্থনীতির আরো কিছু সূচক দেখেন যেখান থেকে কিছু কিছু ঝুঁকি বা দুর্বলতা লক্ষ করছি তার একটা সবচেয়ে বড় জায়গা যেটা হবে এবার অর্থমন্ত্রীর জন্য সেটা হচ্ছে রাজস্ব সংস্থান করা।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিনিয়োগকে বেগবান করার জন্য আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে যেসব হাতিয়ার থাকে সেটার কিন্তু এক ধরনের দুর্বল প্রয়োগ আমরা দেখি।’

অবকাঠামোর ব্যাপারে দেবপ্রিয় বলেন, ‘মেগাপ্রকল্পগুলোর মূল সমস্যা, সময় অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয় না। যেহেতু সময় অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয় না এর ফলে প্রকল্পের অর্থের পরিমাণকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়। আমি যত দূর পড়েছি কাগজে, পদ্মা সেতু প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নে আট হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হয়েছে। আগামীতে যদি এটা দীর্ঘসময় ধরে চলে তবে অন্য কিছুতে সমস্যা হবে। দ্বিতীয় যেটা সমস্যা হচ্ছে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এডিপিতেও সবসময় যথোপযুক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় না। ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেগুলো শেষ হওয়ার কথা সেগুলোতে যত পরিমাণ অর্থ দিলে সেটা সে বছর শেষ হবে সময়মতো সে পরিমাণ অর্থ কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই বরাদ্দ করা হয় না।’

দেবপ্রিয় আরো বলেন, ‘কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। কেন চাল আমদানি হচ্ছে? যার (আমদানি করা চাল) গুণমান সম্পর্কে প্রচুর সন্দেহ আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চিন্তার ব্যাপার হলো বাংলাদেশ সরকার আগামীতে বিশ্বব্যাংক থেকে আধা বিলিয়ন ডলারের একটি বাজেটারি সাপোর্ট প্রোগ্রামের ভেতর ঢুকছে বলে আমরা শুনছি। যদি বিশ্বব্যাংকের সাথে এর ভেতরে ঢুকে যায় যার অর্থের পরিমাণ খুবই সামান্য তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে এসব জিনিস করার জন্য যে দাবিগুলো আমরা করছি, কোনো কোনো সময় অর্থমন্ত্রী একমত হচ্ছেন, সেটা করার নীতিগত জায়গা সরকারের খর্ব হয়ে যাবে কি না আগামী বছর এ দুশ্চিন্তা রয়েছে।’    

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। বিদ্যুতে উৎপাদন বাড়লেও গুণগত সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন করা জরুরি। বেদখল হওয়া সরকারি সম্পদ উদ্ধার করে বিনিয়োগকারীদের দিলে উৎপাদন বাড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া দরকার। ব্যবসায়ীরা ভুর্তকি পান। কিন্তু যারা প্রবাসে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ অন্যান্য দেশে কাজ করনে তাঁদের কিছু দিতে পারছি না। তাঁরা ফিরে এলে তাঁদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া, তাঁরা বিনিয়োগ কীভাবে করতে পারেন তা দেখা দরকার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মঞ্জুর এ এলাহী বলেন, ‘সরকারকে ঠিক করতে হবে বাজেট রাজস্বমুখী হবে নাকি বিনিয়োগমুখী হবে। স্পষ্টতই সবাই বলবে তা বিনিয়োগমুখী হওয়া উচিত।

বিনিয়োগ যত বাড়বে তত রাজস্ব বাড়বে, চাকরি হবে, প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। দারিদ্র্য বিমোচন হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আমাদের বিনিয়োগে হচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না কারণ অর্থমন্ত্রীর এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। উনি যেটা করতে পারেন সুদের হার নিয়ে কাজ করতে পারেন। ডাবল ডিজিট সুদের হার দিয়ে বিনিয়োগ খুব একটা করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি গ্যাস ও জমি দেন, বিনিয়োগ বাড়বে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা  আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রলিয়াম পণ্যের দাম কমে যাওয়ার ফলে সরকার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। তিনি আরো বলেন, ‘পেট্রলিয়ামের দাম কমানো উচিত। যেহেতু বিশ্ববাজারে এর দামও কম। তাতে পরিবহনের খরচ কমতে পারে। এর জন্য সরকারের নজরদারি ব্যবস্থাটা থাকা দরকার।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগের অন্তরায়। প্রয়োজন দলীয়করণ মুক্ত সুশাসন। তিনি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও এর বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদার পিপিপির ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী উৎসাহী ছিলেন। যে কারণে তা হতে পারেনি মনে হয় আস্থার অভাব। সরকারি উদ্যোগের ওপর আস্থার অভাব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আশা করব উৎপাদনকারী ও ভোক্তার ভারসাম্যপূর্ণ স্বার্থ সংরক্ষণের কথা থাকবে বাজেটে।’