চালের বাজার নিয়ে চালবাজি ঠেকান
বিলম্বে হলেও চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ধান-চালের বাজারে। তবে সরকার সতর্ক না থাকলে আবারও ধস নামতে পারে বাজারে, এমনটা মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে কৃষক কতটা উপকৃত হবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কৃষককে প্রণোদিত মূল্য দিতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ধান উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে জোর দিতে হবে। আর চালের বাজার নিয়েযেন চালবাজি না হয়, সেজন্য সরকারের কঠোর নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
ধানের বাম্পার ফলন মানেই লোকসান –এটিই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকের। এবারের ধানের ফলনেও কি তেমন মূল্য পাওয়া যাবে না-দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বোরোচাষিরা। মাঠের ধান হাটে নিতেই তাঁদের গুনতে হচ্ছে মণপ্রতি দেড়শ থেকে দুইশ টাকার লোকসান।
ধানের বাজার মন্দার জন্য দায়ী করা হচ্ছে শূন্য শুল্কে চাল আমদানিকে। চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করা না হলেও দেশের বাজারে ভারত থেকে ঢুকে পড়েছে প্রায় ১৪ লাখ টন চাল। অবশেষে টনক নড়ে সরকারের। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে ১০ মে থেকে বসানো হয় ১০ শতাংশ শুল্ক।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি তৌফিক ইসলাম বাবু বলেন, ‘এ বছর ধানের বাজার একটু কম থাকার কারণে সব মিলের পক্ষ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। তাঁরা মনে করছে, ধান কিনে কিছু ব্যবসা করতে পারবেন। এটার কারণেও ধানের বাজারদর কিছুটা বেড়েছে।’
নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘ভারতের বাজারটা এখন যে পর্যায়ে আছে, তার নিচে যদি নেমে যায়, তাহলে এই ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ কোনো কাজেই আসবে না। আর বাংলাদেশের ধান-চালের বাজার আবার কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
শুধু শুল্ক আরোপ করে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিশ্চিত করা যাবে না ধান-চালের ন্যায্যমূল্য। উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করতে দূরদর্শী একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘পুরো চেইনের মধ্যে মিল মালিকরাই কিন্তু শক্তিশালী অবস্থানে থাকেন। আর এ ধরনের পরিকল্পনা (আমদানি শুল্ক আরোপ) বাজারের ওপর যখনই কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন সেটার সুবিধা কৃষক পান না; পান মিল মালিকরা, আড়তদার ইত্যাদি যারা সামনের দিকে আছেন তাঁরা। সেই জায়গাতে আমাদের প্রকিউরমেন্ট প্রাইস এবং কৃষকদের অন্য যেসব প্রণোদনা সরকার দেন, সেসব পিলসিকেও কাজে লাগাতে হবে। একটা পলিসি দিয়ে আমার মনে হয় না কৃষককে প্রণোদিত মূল্য দেওয়া যাবে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. জেড করিম বলেন, ‘উৎপাদন খরচ যদি কমানো যায়, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় –এটাই সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নের চাবিকাঠি। ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে পারে তিনটি বিষয়, তা হচ্ছে- সেচ, পোস্ট হার্বেস্ট লস কমানোও এনার্জি সেভ করা।’ আর চালের বাজার নিয়ে যেন কোনো চালবাজি না হয়, সেদিকেও সরকারিভাবে বাজার নজরদারির ওপর জোর দেওয়ারও তাগিদ দেন তিনি।