‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যের কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ’

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার উন্নয়নে নীতি ও আইনবিষয়ক ফোরাম’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি : বাসস

বাংলাদেশ আসিয়ান, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য কেন্দ্র এবং ব্যবসার সেতুবন্ধন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ভুয়াং দিন হিউয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের এই সহসভাপতি।

ড. যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে শিগগিরই এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকটি এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষর করার চেষ্টা করবে।’

ড. যশোদা জীবন আরও বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার হলে বাংলাদেশ, বিশেষ করে আসিয়ান সদস্যদের নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে। আসিয়ান অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক চায়। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভৌগলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আসিয়ানকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন দিতে পারে।’

এফবিসিসিআইয়ের এই সহসভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ তাই আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের (আরসিইপি) জন্য আসিয়ানের সঙ্গে একটি লাভজনক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।’

ড. যাশোদা বলেন, ‘ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ উভয় দেশই ঐতিহাসিকভাবে সার্বভৌমত্বের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। জাতি হিসেবে আমরা সহিষ্ণু, অধ্যবসায়ী ও গতিশীল। এ বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি এফবিসিসিআই দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।’

ড. যশোদা আরও বলেন, ‘রপ্তানি বাস্কেটকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামের জনসংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত সুবিধা লাভের সুযোগ নিতে পারে।’

বৈঠকে ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ভুং দিন হিউ তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভিয়েতনামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ভিয়েতনাম বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী।’  

ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের কর্মকর্তাদের ভিয়েতনাম সফর ও বাজার ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান ভুং দিন হিউ। ভিয়েতনাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ভিসিসিআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার এবং এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

পরে হোটেলে ‘ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার উন্নয়নে নীতি ও আইন বিষয়ক ফোরাম’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অংশীদারিত্ব দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি বিশেষত্ব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বিমুখী বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বজায় রেখে ২০২১-২২ সালে ১১০২ দশমিক ৭৭ মিলিয়নে ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৯২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার এবং ভিয়েতনাম থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১০১০ মিলিয়ন ডলার।’

এফবিসিসিআইয়ের এই সহসভাপতি বলেন, ‘ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।’

শমী কায়সার উল্লেখ করেন, ‘যদিও ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নেই, তবুও উভয় দেশই বাণিজ্যের ওপর জোর দিয়েছে এবং তাদের নিজ নিজ ব্যবসায়িক সম্প্রদায়, উদ্যোক্তাদের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ অর্জনের জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।’

শমী কায়সার আরও বলেন, ‘আমাদের এগ্রো এবং ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এখন রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের আরএমজি সেক্টর চীনের পরে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবুজ আরএমজি কারখানার মধ্যে শীর্ষ আটটি বাংলাদেশে অবস্থিত। নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’

ভিয়েতনামের উদ্যোক্তাদেরকে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক পার্ক, পর্যটনে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান এফবিসিসিআইয়ের এই সহসভাপতি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত নগুয়েন মান কুওং, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, ইন্টারন্যাশনাল উইংয়ের প্রধান রাষ্ট্রদূত মসয়ুদ মান্নান এবং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।