ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্য মেলা, ব্যবসায়ীদের চোখে খুশির ঝিলিক 

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আজ শুক্রবার মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

দেশে যখন বইছে শৈত্যপ্রবাহ, তখন শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। তার ওপর শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ছিল কর্মদিবস। ফলে জমে উঠছিল না মেলা। বিক্রি ছিল কম। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও তাই দেখা দিয়েছিল হতাশা। এ বছর জমবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন তারা। বলছিলেন—যা বিক্রি হয়, তাতে মেলায় অবস্থান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাওয়ার টাকাই উঠছিল না তাদের। আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১টা নাগাদ এমন হতাশা জেঁকে বসেছিল তাদের মধ্যে। তবে, সময় গড়াতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বিকেল ৩টার দিক থেকে দলে দলে আসতে শুরু করে মানুষ। জনস্রোতে মেলা প্রাঙ্গণে ঢল নামে যেন হাজারও লোকের। আর তাতেই ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে খেলে যায় আলোর ঝিলিক।

উদ্বোধনের পর আজ শুক্রবার প্রথম ছুটির দিনে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বেলা ১১টায় দেখা যায়, স্টল  সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা, কিন্তু ক্রেতা নেই। দর্শনার্থীও ছিল না তেমন। বিক্রেতাদের চোখেমুখে তাই লেপটে ছিল হতাশার ছাপ। অধিকাংশ স্টলে তারা অলস সময় পার করছিলেন। এ সময় কয়েকটি স্টলের ব্যপস্থাপকরা সঙ্গে কথা হলে তারা এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত পাঁচ দিনে মেলায় জনসমাগম কম,  বিক্রি কম, এখনও জমছে না। আরও জানান, এ বছরও জমবে কি না সন্দেহ।   তারা বলেন, যা বিক্রি হচ্ছে তাতে মেলায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাওয়ার টাকা  উঠছে না। 

এরপর গড়াতে থাকে সময়। দুপুর গড়িয়ে যায়। মাঠে সকালের অবস্থার পরিবর্তন হতে দেখা যায় না। তারপর দ্রুত পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। সময় তখন বিকেল ৩টা। হঠাৎই মানুষের স্রোত। মুহূর্তেই ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। আধা ঘণ্টার মধ্যে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বাণিজ্যমেলা। বদলে যায় ব্যবসায়ী-বিক্রেতাদের আগের সব কথা। সন্ধ্যা ৬টায় জানান, গত পাঁচ দিনের তুলনায় বিক্রি অনেক বেড়েছে। আর মেলার আয়োজকরা জানান, প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি লোক সমাগম হয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি)  মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আসর বসে। আজ দেশি স্টলের মধ্যে মহিলাদের প্রসাধনী, অলঙ্কার, বাচ্চাদের খেলনায় নজর বেশি ছিল ক্রেতাদের। সিরামিক, ফার্নিচার আইটেমের স্টলেও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লামিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘ছুটির দিন, তাই এসেছি। ভালো লাগছে। কিছু কেনাকাটা করেছি। তবে, দূরত্বটা অনেক বেশি। এটা বড় সমস্যা। শহরের মধ্যে হলে ভালো হতো।’

ঈগলু আইসক্রিম স্টলের ম্যানেজার আল আমিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত কয়দিনে মেলায় জনসমাগম কম ছিল। শুধুমাত্র পানি, কফি, আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছিল। আজ দুপুরের পর জনসমাগম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মেলার চিত্র পাল্টে গেছে।’

বিদেশি স্টল তার্কিসের সেলস ম্যানেজার আন্দ্রে লুসিয়া বলেন, তার্কিস স্টলে নারীদের পছন্দের জিনিসপত্র রয়েছে। এ ছাড়া ঘর সাজানোর চমৎকার লাইটিংসহ আসবাবপত্র রয়েছে। 

এ সবের পাশাপাশি চায়না, ইরানি স্টলে বেশি ভিড় দেখা যায়।  চায়না বাজার স্টলের সেলস ম্যানেজার শামীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ বিক্রি বেড়েছে। দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। আশা করছি, দিনদিন বিক্রির পরিমাণ বাড়বে।

ছুটির দিনে মেলার সার্বিক বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‌‌‘আমরা যেই দর্শনার্থী প্রত্যাশা করেছিলাম, সেই প্রত্যাশা আজ পূরণ হয়েছে। আজ প্রায় লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে মেলায়। কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন বিক্রি করতে পারেননি। আশা করছি, এখন থেকে ধারাবাহিক লোকজন আসবে।’

২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এবারের মেলা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে  মেলা। তবে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২৫ টাকা। মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য শাটল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কুড়িল বিশ্ব রোড হতে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলাচল করবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহকারি পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৫১ টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। বিদেশি স্টল বসেছে ১১টি। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নিয়েছেন। 

১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি। ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হতো এই মেলা। পরে জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্য মেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর থেকে ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলতি বছর নিয়ে সেখানে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।