রমজানে নিত্যপণ্যে ন্যায্য মুনাফা করতে এফবিসিসিআইয়ের আহ্বান
আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এবং এই মাসে ন্যায্য মুনাফা করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। গতকাল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে কেউ যাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, এজন্য বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদেরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
‘সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়’ উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যের ক্ষেত্রে যাতে অস্বাভাবিক পার্থক্য না হয়, সেজন্য মনিটরিং (নজরদারি) ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজান মাস ইবাদতের মাস। আপনারা সারা বছর ব্যবসা করেন, রমজান মাসেও করবেন। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে উৎসব উপলক্ষে ছাড় দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও তেমন হতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের বেশি দাম রাখবেন না। আপনারা রমজান মাসে ন্যায্য লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক আছেন। তাই এই দিক সবাইকে সাবধান হতে হবে।’ এফবিসিসিআই কোনো অসৎ ব্যবসায়ীর পক্ষে কথা বলবে না বলেও জানান তিনি।
রমজানে বাজার নজরদারি করা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমিও একমত। পুলিশ দিয়ে বাজার মনিটরিং করানো হোক, তা আমি চাই না। বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনিটরিং করলেই হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকি না করলে ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে। এটা আমরা চাই না। কাজেই আমি প্রতিটি বাজার কমিটিতে অনুরোধ করব, আপনারা তদারকি কার্যক্রম জোরদার করেন।’
সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘অসাধু কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে এফবিসিসিআই নেই। তাদের বিরুদ্ধে সব সময় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি এফবিসিসিআই থেকেই এবার বাজার মনিটরিং করা হবে।’
এর আগে সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ও মালিকরা।
‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুত আছে’ উল্লেখ করে ভোগ্যপণ্যের দাম না বাড়ার আশ্বাস দিয়েছেন পণ্যের উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। এদিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠতে যাচ্ছে উল্লেখ করে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, এর ফলে আসন্ন রমজানে বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে না।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খেজুর আমদানিতে উচ্চ ডিউটি না থাকলে অনেক কম দামে খেজুর বিক্রি করা যেত। অথচ যারা ডিউটি নির্ধারণ করেন তাদের কোনো দায় হয় না। দায় হয় সরকারের অথবা ব্যবসায়ীদের।’
রমজানে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, মসলা ইত্যাদির দাম বাড়লে রেস্তোরাঁ মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, মো. মুনির হোসেন, সংগঠনের পরিচালকরা, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।