জুয়েলারী ব্যবসায় দ্রুত ইএফডি মেশিন বসানোর প্রস্তাব বাজুসের

Looks like you've blocked notifications!

বৈধ পথে সোনার বার, কয়েন ও সোনার অলংকার তৈরি ও রপ্তানিতে সরকার বারবার উৎসাহ দিয়ে আসছে। এরপরও কেন জানি এই খাত সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানীর উপর অসম শুল্ক হারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় শিল্পের উপর রয়েছে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট এবং উদ্যোক্তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিত উৎসে কর হারের বোঝা। অথচ এই খাতটি রপ্তানি আয় ও রাজস্ব আহরণে হতে পারত সরকারের অন্যতম আস্থার খাত বলে জানিয়েছেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। এসময় সোনার ও রূপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার তিন শতাংশ করা করার ওপর জোড় দেন। একই সাথে সরকারের প্রতি  নিবন্ধনকৃত সব  জুয়েলারী ব্যবসায় দ্রুত ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি মেশিন বসানোর প্রস্তাব রাখেন।

আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট ২০২৪-২০২৫ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে  জুয়েলারী খাতের উন্নয়নে সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চাওয়া আগামী ২০২৪—২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে লিখিত আকারে ১৫টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।  

অপরিকল্পিত আমদানী শুল্ক-করহার, শুল্ক—কর রেয়াত এবং কাঠামোগত শুল্ক ও শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতা জুয়েলারি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে মন্তব্যে করে আনোয়ার হোসেন বলেন, এতে ২ লাখ কোটি টাকার স্থানীয় সোনার বাজার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সফলভাবে অবদান রাখতে পারছে না। এই সঙ্কট উত্তোরণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে এবং জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পাশাপাশি আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক—কর ও স্থানীয় বাজারে ভ্যাট কমাতে হবে। সোনা খাতের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে যেমন সোনা খাতকে শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। তেমনি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪—২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে ১৫টি সুনির্দিষ্ট তুলে ধরেন।  

এগুলোর মধ্যে বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সোনা, সোনার অলংকার, রূপা বা রূপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাটহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা; ইএফডি মেশিন যতো দ্রুত সম্ভব নিবন্ধনকৃত সব জুয়েলারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা; অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানী শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র জুয়েলারি খাতের জন্যে রেয়াতি হারে এক শতাংশ নির্ধারণ করা; আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার ৫ শতাংশ করা; সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করা; হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করা; ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের এইচ.এস কোড (৭১০৪.২১.১০) অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা; বৈধ পথে মসৃন হীরা আমদানীতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানীকৃত মসৃন হীরা ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা; আয়কর আইন ৪৬-(বিবি)(২) ধারার অধীনে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ করা; সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব প্রকার শুল্ককর অব্যাহতি সহ ১০ বছরের কর অবকাশ করা; আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্ব প্রাপ্তের “নির্দিষ্ট ব্যক্তি” আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এছাড়া ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮ দশমিক ২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রী সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা। এক্ষেত্রে একটি আইটেমের জুয়েলারি পণ্য দুইটির বেশি আনা যাবে না এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে ব্যাগেজ রুলের সমন্বয় করা সহ একই সঙ্গে একজন যাত্রী বছরে শুধুমাত্র একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিতে পারবে; বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজনে ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া; এইচ এস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহার সমূহ হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা; মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের উদ্ধারকৃত সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থা সমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদান করার বিশেষ প্রস্তাব রাখেন।