দোকানের চেয়ে নিউ মার্কেটের ফুটপাতে ক্রেতা সমাগম বেশি

সামনে ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে বাড়ছে কেনাবেচার ব্যস্ততা। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি। অনেকেই দর কষাকষি এড়াতে এক দামে করছে বেচাকেনা। আজ শনিবার (২২ মার্চ) এমন দৃশ্য দেখা মেলে ঢাকা নিউ মার্কেটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিউ মার্কেটের দোকানগুলো থেকে দোকানগুলোর সামনের ফুটপাতে ক্রেতার সমাগম অনেক বেশি। আজ সকাল থেকেই ক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে নিউ মার্কেট। বেলা বাড়ায় সেই উপস্থিতি আরও বাড়ে। আজ বিকেল পাঁচটার দিকে নিউ মার্কেটের ফুটপাতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। মার্কেটের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের সমাগম ছিল। এসময় বিক্রেতাদের হাকডাকে বিক্রি ও ক্রেতাদের কেনাকাটায় এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে এ মার্কেটে।
দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ বাজারে শিশুদের জন্য বাহারি রঙয়ের পোশাক ও জুতার পসরা সাজিয়েছে ব্যবসায়ীরা। অপরদিক নারী ও মেয়েদের চাহিদার তুলনায় বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় শাড়ি, বোরকা, থ্রিপিস, টুপিস, ওয়ান পার্টসহ জুতার পসরা রয়েছে। মার্কেটের ফুটপাতে টুপিস ও ওয়ান পিসগুলো ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। আর থ্রিপিস ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বোরকাও মিলছে হাজার টাকার মধ্যে। তবে মার্কেটের দোকানগুলোতে এগুলোর দাম ভিন্ন। সেখানে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। অবশ্য দোকানদার বলছে, তাদের মান ভাল। ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, টি শার্ট, জিন্সসহ সবধরনের প্যান্ট পসরা সাজিয়েছে ব্যবসায়ীরা। যেন সবখানেই রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। অপরদিক বেচাবিক্রিতে পিছিয়ে নেই জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।
এবারে নারীদের কোন পোশাকের চাহিদা বেশি এমন প্রশ্নে বিক্রেতারা বলেন, আমাদের দেশে সবসময়ে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ব্রান্ডের থ্রিপিসের চাহিদা বেশি ছিল। কিন্তু এবারে ব্যতিক্রম। সবার পছন্দের শীর্ষে এবারে পাকিস্তানি বিভিন্ন ব্রান্ডের থ্রিপিস রয়েছে। দেশি থ্রিপিসও রয়েছে। গরমকালকে সামনে রেখে সুতি পোশাক বেশি কিনছেন বেশিরভাগ নারী। তবে অল্পবয়সী মেয়েরা জাঁকজমক ভারী পোশাকের প্রতি চাহিদা অনেক। তাদের চাহিদা মাথায় রেখে বাজারে এবার জাঁকজমক ভারী পাকিস্তানি থ্রিপিস বেশি। দাম দুই হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজারের মধ্যে। এর ওপরের দামের জামা রয়েছে। তবে এর ক্রেতা খুব কম। তারা বলেন, গতবারের তুলনায় এবারে মার্কেটে বেশি মানুষ এলেও কিনছে কম। কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আগের চেয়ে কমেছে। ব্যয়ের সাথে মানুষের আয় বাড়েনি। অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে।

মার্কেটে ঈদ বেচাকেনা জমেছে জানিয়ে শাওন ফ্যাশনের বিক্রেতা হাবিব বলেন, গতকাল শুক্রবারের মতো আজও মানুষের ভিড়। সেই তুলনায় বেচাবিক্রি কম। এবারে মার্কেটে পাকিস্তানি থ্রিপিস খুব চলছে। আমাদের দোকানে তিন হাজার থেকে দশ হাজার টাকার থ্রিপিস আছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্রান্ডের সুতি দেশি জামা বিক্রি হচ্ছে।
থ্রিপিস কিনতে আদাবর থেকে আসা রাজিয়া চৌধুরী বলেন, মেয়ের জন্য জামা কিনতে এসেছে। যেটা পছন্দ হচ্ছে, সেটাই ছয়-সাত হাজার টাকার বেশি। বাজেটের মধ্য কিনতে পারছি না। মার্কেটের ফুটপাতে থেকে আমার জন্য দুটো সুতি জামা কিনেছি, দাম নিয়েছে দুই হাজার ৬০০ টাকা।
এশিয়া বোরকা হাউসের বিক্রেতা আল আমিন বলেন, মানুষের আনাগোনা অনেক। বিক্রি হচ্ছে। চাঁন রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে। মানিকনগর থেকে আসা বোরকা ক্রেতা মরিয়ম আক্তার বলেন, মনে হচ্ছে, এবারে বোরকার দাম বেশি। তবে অনেক ঘুরে একটি বোরকা কিনেছি। আরও কেনার জন্য ঘুরছি। গতকালের মতো আজও মানুষের ভিড় জানিয়ে ফুডপাতে থ্রিপিস বিক্রেতা শাওন বলেন, এক দামে বিক্রি করছি থ্রিপিস। যেটাই নিবে ৯০০ টাকা। ভাল বিক্রি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। ফুটপাতে থ্রিপিস বিক্রেতা ফারদিন বলেন, যেটাই নিবে এক দাম। প্রতি পিস সাড়ে ৮শ টাকা। সকাল থেকে ক্রেতা ভাল জানিয়ে ফুটপাতে টুপিস বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার এখানে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের টুপিস আছে। ভাতিজার জন্য জামা কিনতে আসা নাবিলা বলেন, মার্কেট দোকানগুলোতে হাত দেওয়া যায় না। অনেক দাম। তাই বাধ্য হয়ে ফুটপাত থেকে নিজের সাধ্যমত পোশাক কিনেছি।
গত বছরের তুলনায় এ বছর মানুষের সমাগম বেশি জানিয়ে ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির ম্যানেজার মো. ফিরোজুল ইসলাম বলেন, মানুষের উপস্থিতির তুলনায় বেচাবিক্রি কম। তবে আরও আট-নয়দিন আছে। সামনে বেচাবিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি। ক্রেতাদের নির্বিঘ্নে কেনাকাটা ও মার্কেটের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ৩২ জন নিরাপত্তাকর্মী সবসময় মার্কেটের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে। ২৪ ঘণ্টাই ৬৪টি সিসি ক্যামেরায় মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো মনিটরিং করছি। পাশাপাশি রাতে টহল পুলিশ কাজ করছে।