সরকার বদল হলেও প্রক্রিয়া বদলায়নি : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে এতগুলো সংস্কারের কর্মসূচি হয়েছে, এত সংস্কারের পথরেখা চান, নির্বাচনের পথরেখা চায়, বিচারের পথরেখা চায়। আমি জিজ্ঞেস করি, আমার অর্থনীতির পথরেখা কোথায়?’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বদল হলেও প্রক্রিয়া বদল হলো না। কিন্তু অর্থনীতির পরিকল্পনা কোথায়?’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিভি ও এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ড. মঈন খানের কথা থেকে বলি। আমি আগে তো বলেছি, তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সরকার এসেছিল। তা হলো—ভিত্তিভূমিকে নির্দিষ্ট করা, স্থিতিশীলতাকে ফিরে নিয়ে আসা এবং সংস্কারের যে প্রতিবন্ধকতা আছে, তা সংস্কারের মাধ্যমে চিহ্নিত করা। কিন্তু এখানে যা ঘটেছে তা প্রত্যাশার অংশ ছিল না।’
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘ড. মঈন খান বললেন, আলাপ-আলোচনা কতটুকু সীমিতভাবে হয়েছে। আমি তার দুটি উদাহরণ আপনাদের বলি। এখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয় এখানে বসা আছেন এবং কমিটির প্রধান আছেন, উনারা কাজ করেছেন। আমার শ্বেতপত্রেও বলা আছে, এটাকে দুই ভাগ করা হোক। যারা কর আহরণ করে এবং যারা কর নীতি করে দুজনকে একসঙ্গে থাকা উচিত না। এখানে স্বার্থের সংঘাত হবে। একটা ঠিক কাজ আলাপ আলোচনা ব্যতিরেকে যে কমিটি রিকমান্ড করেছিল তা পরিপালন না করে, যদি আপনি বাস্তবায়ন করতে চান, আপনার যে দুঃখজনক পরিণতি হয়েছে, তা-ই হওয়ার কথা। ঠিক কাজও যদি সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে করেন, তাহলে এমন পরিণতি হবে।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি আরেকটি উদাহরণ দেই, এই যে স্টক মার্কেটের জীর্ণদশা। এটা আসলেই মৃত প্রায়। ওটা আইসিইউর ভেতরে। ছিল ২৭ শতাংশ, কিন্তু এখনও জিডিপির ভ্যালু হিসেবে আছে ৯ শতাংশ। এটাকে চালু করার জন্য যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, তাহলে স্টক মার্কেটে যারা অংশীদার রয়েছেন, তাদের সঙ্গে যদি আলোচনা না করে সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন একা করতে যায়, তাহলে কোনোদিনই সম্ভব না। মানুষের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে ঠিক কাজও বেঠিক হয়ে যায় যদি আলাপ আলোচনা উন্মুক্ত না থাকে। এটা আমার প্রথম বক্তব্য আপনার কাছে। আলাপ-আলোচনা করতে হবে এবং সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। কী পরিবর্তন করলাম একটা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে।’
সিপিডির এই সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় বক্তব্য আপনাদের কাছে, ড. আনিুজ্জামান আছে এখানে, সেটা হলো অর্ন্তবর্তীকালীন বাজেটের বিষয়ে বলেছেন। অর্ন্তবর্তীকালীন বাজেট কী? যে বাজেট নিয়ে কাজ করছেন সেটা পতিত সরকারের বাজেট। পতিত সরকারের বাজেট নিয়ে আপনি প্রথমে প্রাক্কলন করেছেন জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের দিকে এসে। কিন্তু কাঠামোগত কী উন্নয়ন করলেন? ওই প্রাক্কলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ধারণা ছাড় দেবেন না বলতেছেন। এখানে কাকে ছাড় দিচ্ছেন, কাকে ভর্তুকিতে রাখছেন? ইন্টারেসট রেট কোথায় দিচ্ছেন? কে বলতে পারবে আপনি কী স্বচ্ছতা দিয়েছেন আমাকে। ওই স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যে স্বচ্ছতার অভাব দেখেছি, সবাইকে আমাদের থামিয়ে দিয়েছেন। এখনও কাজটা আপনারা একই রকম করলেন। আপনারা কোনো স্বচ্ছতা দিলেন না।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘ওই পতিত সরকারের যে এডিপি ছিল, ওই এডিপি থেকে কেমন করে কমানো হলো। ওই মেগা প্রজেক্টগুলো যে অতিমূল্যায়িত ছিল, কোথায় টাকা কমিয়েছেন। আমি তো আবার মেগা প্রজেক্টের অল ইকুশেয়ন দেখতে পারছি। আপনি ওখানে কীভাবে সামাজিক সংস্কারের অংশ হিসেবে কীভাবে নতুনভাবে স্থান দিলেন, কোনো নীতিমালা হলো না। এখন সেই আগের এডিপি এখন চলছে। আমি সেটার ভিত্তিতে কাজ করছি।’
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমি আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি, যে বাজেট করতে যাচ্ছেন এই সরকার তো নিঃসন্দেহে বৈধ সরকার, তবে নির্বাচিত সরকার তো না। তারতো নিঃসন্দেহে সীমাবদ্ধতা থাকবে। এই সরকার তো পুরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না। যদি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে ফলো করি, তাহলে যারা পরবর্তী বাজেটে আসবে তারা যে এটার ধারাবাহিকতা রাখবে, এটার নিশ্চয়তা কীভাবে রাখব। এত বড় আমার ইনভেস্টমেন্ট সামিট হয়ে গেছে। রাতের বেলা সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, তোমাদের নীতি কাঠামো কোথায়? আমি তো বলতে পারি নাই। এতগুলো সংস্কারের কর্মসূচি হয়েছে, এত সংস্কারের পথরেখা চান আপনারা বাই। সবাই নির্বাচনের পথরেখা চায়, বিচারের পথরেখা চায়। আমি জিজ্ঞেস করি, আমার অর্থনীতির পথরেখা কোথায়? সরকার বদল হলেও প্রক্রিয়ার বদল হলো না।’
দেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত ৮টায় শুরু হয় এনটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কেমন বাজেট চাই’। এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই যৌথভাবে ১৬তম বারের মতো এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানটি রাত ৮টা থেকে এনটিভির তেজগাঁও স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রচারিত হচ্ছে বাজেট নিয়ে এনটিভির এই আলোচিত অনুষ্ঠানটি। বাজেট নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশাগুলোকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিতেই এনটিভি ও এফবিসিসিআইয়ের এই যৌথ আয়োজন।